ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মারাত্মক ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশের স্যানিটেশন শ্রমিকরা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
মারাত্মক ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশের স্যানিটেশন শ্রমিকরা ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’র লোগো

ঢাকা: বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ সুইপার রয়েছেন যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এসব শ্রমিকরা কোনো সরঞ্জাম ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে মনুষ্যবর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নেমে পড়েন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য চরমভাবে বিপজ্জনক।

সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংকে ট্যাংকি গ্যাস যেমন- অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড থাকায় শ্রমিকরা অজ্ঞান হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মুখে পড়েন। যদিও বিশ্বব্যাপী কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে শুধুমাত্র ভারতে প্রতি পাঁচদিনে তিনজন স্যানিটেশন শ্রমিক মারা যান, অসংখ্য শ্রমিক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মারাত্মকভাবে আহত হন এবং প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে আয়ুষ্কাল কমে যায়।

১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন শ্রমিকদের মর্যাদা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াটারএইড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্মিলিতভাবে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  

আর স্যানিটেশন শ্রমিকদের নির্মম কর্ম পরিবেশের কথা উল্লেখ করে সেটি পরিবর্তনে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন।

এ প্রসঙ্গে ওয়াটারএইড’র সিইও টিম ওয়েইনরাইট বলেন, স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয়। যা তাদের স্বাস্থ্য, এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া উপযুক্ত সরঞ্জাম, সম্মান এবং জীবনরক্ষাকারী কাজে নিয়োজিত হওয়ায় মর্যাদার পাওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বৈষম্য ও দারিদ্র্যতার শিকার হতে হয়, যা সত্যিই হতাশাজনক। দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন মারা যান মানুষ, যা আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না।         

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের ডিরেক্টর মারিয়ে নেইরা বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মৌলিক যে নীতি তা হচ্ছে ‘প্রথমে কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না’। সারাবিশ্বেই স্যানিটেশন শ্রমিকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এটি মানা যায় না। এসব মানুষের জন্য কাজের পরিবেশ উন্নয়ন এবং গতিশীল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

আএলও’র সেকটরাল পলিসিজ ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর অ্যালেটে ভ্যান লিউর বলেন, স্যানিটেশন শ্রমিকদের ঘিরে নীতি, আইন ও নিয়মের অভাব আছে। যেসব জায়গায় তারা বসবাস করেন তা অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আনুষঙ্গিক প্রয়োগকারী প্রক্রিয়ার অভাবও লক্ষ্যণীয়।    

বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের ডিরেক্টর জেনিফার সারা বলেন, এখনই সময় স্যানিটেশন শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে সবাইকে এগিয়ে এসে কাজ করার। বিশ্ব ব্যাংকের ‘আরবান স্যানিটেশন প্রোগ্রাম’র আওতায় আমরা স্যানিটেশন শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।