ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

করোনাকালেও ৯৩ ভাগ চিকিৎসা বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২০
করোনাকালেও ৯৩ ভাগ চিকিৎসা বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে

ঢাকা: বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬.৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩.৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই।

সারাদেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪.১ শতাংশ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। এর অধিকাংশই আবার রাজধানী ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ। তাও আবার মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসারণ ও শোধন করা হয়। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও, তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাপনা নেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর।

ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি পরিচালিত ‘করোনা মহামারিকালে কার্যকর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট ২০২০ সময়কালে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল সোমবার (৫ অক্টোবর) এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গবেষণায় আরো উঠে আসে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২.৪৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে অপসারণ করা হয়। মাস্কসহ অন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেন ৭১ ভাগ মানুষ, যার সিংহভাগই শহুরে। যারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেন সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের ১০০ ভাগই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে তা অপসারণ করেন। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও জানিয়েছেন তারা প্রায় সব বাড়ি থেকেই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের বর্জ্য পান। যদিও ৮১.৪ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন এসব বর্জ্য থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা আছে এবং ৯০.৬ ভাগ মানুষ মনে করেন এসব বর্জ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।  

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বাংলানিউজকে বলেন, গত মে মাসে শুধু ঢাকাতেই ৩ হাজার টন মেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার চলতি বছরের ৩০ মে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। ৮২.১ ভাগ মানুষের কাছে এটি অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এসব সুরক্ষা সামগ্রী পুন:ব্যবহার করেন।

প্রায় ৫ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৮.৫ ভাগ মনে করেন অধিকাংশ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী একবার ব্যবহারযোগ্য। ৮৩.৭ ভাগের মতে, অধিকাংশ মানুষ এসবের সঠিক অপসারণ সম্পর্কে সচেতন নন। ৮৮.৪ ভাগ মানুষ মনে করেন, বাসাবাড়ির বর্জ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মেশানো উচিত নয়। এজন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি দরকার বলে মনে করেন ৯২.৪ ভাগ মানুষ।

এই জরিপে স্বাস্থ্যখাতে সেবাদানকারী ৩০০ জন ব্যক্তি অংশ নেন, যাদের মধ্যে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি ২০০৮’ সম্পর্কে জানেন মাত্র ৪৩.৬ ভাগ। ৮৪ ভাগ চিকিৎসাকর্মী মনে করেন, বর্তমান মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। এই সমস্যা সমাধানে একটি সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা এবং তা বাস্তাবায়ন দরকার বলে মনে করেন ৯০.৩ ভাগ চিকিৎসা কর্মী।

এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে ২০ জন বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করেন, বাসাবাড়ি ও চিকিৎসা কেন্দ্রে কোভিড-১৯ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা নির্দেশিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি।

সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞ দুই পক্ষই মনে করেন, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করা দরকার। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এক করে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বক্তব্য দেন, প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহাম্মদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।