ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে যা খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২০
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে যা খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের রোগীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এতে ভর্তি হওয়া অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

 

২০০৯ সাল থেকে একই ঠিকাদার কাজ করায় এমন অনিয়ম হচ্ছে বলে মনে করছেন হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা। অতিরিক্ত লাভের আশায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএম ফার্মেসি হাসপাতালের প্রভাবশালী তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মজনু মিয়ার যোগসাজশে হাইকোর্ট থেকে একটি স্থগিতাদেশ এনে একাই দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সরবরাহ করছেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের সকালে সাগর কলা ও পাউরুটি দেওয়া হয়েছে। দুপুরে দেওয়া হয়েছে ভাত, পাঙ্গাস মাস ও ডাল। রাতে দেওয়া হবে পাউরুটি, সাগর কলা, ডিম ও রোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করে গুড়া দুধ।

...হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, সপ্তাহে শনি, সোম এবং বুধবার এ তিনদিন পাঙ্গাস ও সিলভারকার্প মাছ দেওয়া হয়। রোববার দেওয়া হয় খাসির মাংস। এছাড়া মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার দেওয়া হয় ফার্মের মুরগির মাংস। এছাড়া সাধারণ রোগী ১৭৫ জন, পেয়িং বেডের রোগী ৬০ জন এবং কেবিনের ১৫ জন রোগীর জন্য প্রতিদিন সকালে পাউরুটি ও সাগর কলা এবং রাতে পাউরুটি, সাগর কলা, ডিম ও ১০০ গ্রাম করে গুড়া দুধ দেওয়া হয় খাওয়ার জন্য।

তবে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের দরপত্রে উল্লেখ রয়েছে, প্রতি রোগীকে খাওয়ার জন্য সপ্তাহে শুক্রবার ও রোববার খাসির মাংস, তিনদিন (পর্যায়ক্রমে) দেশি ও ফার্মের মুরগির মাংস, রুই মাছ, কাতল মাছ, পাঙ্গাস এবং সিলভারকার্প মাছ দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত লাভের আশায় রোগীদের সপ্তাহে একদিন খাসির মাংস, সপ্তাহে তিনদিন ফার্মের মুরগির মাংস এবং পাঙ্গাস ও সিলভারকার্প মাছ ছাড়া কিছুই দেওয়া হয় না। আবার মসুর ডাল দেওয়া হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজির দরের। কিন্তু বিল করা হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা করে।

...নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, কোনো সময়ই রোগীদের রুই বা কাতল মাছ খাবার দেওয়া হচ্ছে না। ঠিকাদার তাদের যে খাবার এনে দেন, সেগুলোই রোগীদের খাওয়ানো হচ্ছে। এছাড়া রোগীদের গাভীর দুধের বদলে দেওয়া হচ্ছে ১০০ গ্রাম করে গুড়া দুধ। এতে করে অনেক রোগীই এগুলো খেতে চান না। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাবের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বিল করার সময় ঠিকই গাভীর দুধ, রুই মাছ, কাতল মাছ, দেশি মুরগির বিল করা হচ্ছে। আর এর ভাগ যাচ্ছে হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত। আর এসব দেখাশোনা করেন প্রভাবশালী তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী। এদিকে দুপুরে প্রতিদিন সবজি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না।

সোমবার (০৫ অক্টোবর) সদর উপজেলার তোরাফগঞ্জ গ্রাম থেকে আসা সেলিনা বেগম (৫৫) নামে এক রোগী জানান, তিনি রোববার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দুপুরে তিনি খাবার খাননি। রাতে পরিবারের লোকজন যে খাবার এনেছিলেন, তাই খেয়েছেন। সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে রুটি আর কলা দিয়েছিল। কিন্তু সেটাও তিনি খাননি। কারণ তার ছেলে জাহিদ হাসান রাতেই তার জন্য বাইরে থেকে পাউরুটি আর সবরি কলা এনেছিলেন।  

দুপুরে খেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে পানির মতো ডাল আর পাঙ্গাস মাছ দিয়ে ভাত দিয়ে গেছে, তবে এখনো খাইনি।

...পাশের বেডের হালিমা খাতুন (৪২) বলেন, শনিবার দুপুরে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ওইদিন দুপুরে হাসপাতালের খাবার খেতে পারিনি। কারণ আমাকে খাবার দেওয়া হয়নি। আমাকে খাবার দেওয়া হয়েছে রোববার সকাল থেকে। দুপুরে দেওয়া হয়েছিল পাঙ্গাস মাছ দিয়ে ভাত আর রাতে কলা-পাউরুটি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রভাবশালী কর্মচারীর যোগসাজশে বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম ধরা হচ্ছে খাদ্য সামগ্রীর। এর ওপর নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। এভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা। আর হাসপাতালের প্রভাবশালী তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর সহযোগিতায় হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় সেই টাকার ভাগ।

কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকার সালাতন বেওয়া নামের এক রোগী জানান, সকালে যে রুটি দেওয়া হয়, সেটা খেতে একটু গন্ধ লাগে। আর দুপুরে যে ডাল দেওয়া হয়, তাকে ডাল না বলে ডাল ধোয়া পানি বলাই ভালো। আর অন্য তরকারিতে লবণ-পেঁয়াজ মনে হয় না দেয়। মাঝে মধ্যে সেই খাবার না খেয়ে ফেলে দিতে হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএম ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লব এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সদর উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সিডিউলে খাবারের তালিকায় যা যা ধরা আছে, তাই খাওয়াতে হবে। আর গাভীর দুধের পরিবর্তে গুড়া দুধ খাওয়ানো একেবারেই বেআইনি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।