ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সর্বোৎকৃষ্ট সেবা: রক্তদান

সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২
সর্বোৎকৃষ্ট সেবা: রক্তদান

ঢাকা: পৃথিবীতে সকল ধর্মেই মুমূর্ষুকে দানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই দান যদি হয় রক্ত, তবে তার মহত্ব ছাড়িয়ে যায় অন্য সব কিছুকে।



কারণ একজনের দান করা রক্ত বাঁচাতে পারে অন্যের জীবন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার বাণীতে বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ তার অপর ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হলে সে যেন তা করে (মুসলিম)। ’

কিন্তু আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় রক্তের সরবরাহ কম। এখনও প্রতিবছর অনেক রোগী রক্তের অভাবে মারা যায়। এর কারণ এ সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা ও অমূলক কুসংস্কার। তাই রক্তদান সম্পর্কে আমাদের সকলের খুঁটিনাটি জানা অত্যন্ত জরুরি।

রক্ত কি কাজে লাগে : মানবদেহে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একজন ব্যক্তির দানকৃত রক্ত অনেক কাজে লাগে। যেমন কোন দুর্ঘটনায় মানবদেহের কোন অংশ কেটে ছিঁড়ে গেলে যে রক্ত বেড়িয়ে যায় সে শূণ্যতা পূরণে রক্ত কাজে লাগে।

এছাড়া মানবদেহে বড় কোন অস্ত্রপচারের সময়ও রক্তের প্রয়োজন হয়। আবার এমন অনেক অসুখ আমাদের রয়েছে যার কারণে রক্ত সম্পূর্ণ তৈরি হতে পারে না। ফলে দেখা দেয় ভয়ঙ্কর রোগ-ব্যাধি, যেমন ব্লাড ক্যান্সার৷ এই মরণ ব্যাধির জন্য শরীরে বারবার রক্ত পরিবর্তন করতে হয়৷ এজন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়৷

এছাড়া অনেকসময় মহিলাদের ঋতুচক্রকালীন যখন শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হয়ে যায়, সেই সময়েও রক্তের প্রয়োজন হয়৷ আবার সন্তান প্রসবের সময়েও গর্ভবতী নারীদের রক্তক্ষরণজনিত কারণে অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়া থ্যালাসেমিয়া, এ্যানিমিয়া, কিডনি সমস্যার মত রোগেও রক্তের প্রয়োজন হয়।

রক্তদাতা কারা ও দানের শর্ত সমূহ : ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক যে কোন সুস্থ নর-নারী রক্ত দাতা হতে পারেন। কিন্তু রক্তদাতা হতে গেলে আপনাকে আরও কিছু বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে।

যেমন যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫ এর কম নয় এবং ওজন ৪৫ কেজির উপরে তারা প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, রক্তদানের সময় শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ অবশ্যই স্বাভাবিক থাকা আবশ্যক।

এছাড়াও রক্তদানের আরও কিছু ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন- রক্তদানের আগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাতা কোন এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করেছেন কিনা, অথবা তিনি জন্ডিস, সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডসের মত রোগে ভুগছেন কিনা।    

কারা রক্ত দিতে পারবেন না : কারা রক্ত দিতে পারবেন আর কারা পারবেন না এ বিষয়ে রক্তের দাতা ও গ্রহীতার সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। যেমন- গর্ভবতী এবং সদ্য সন্তান প্রসবাদের রক্ত দেয়া যাবে না। মহিলাদের ঋতুচক্রকালীন সময়েও রক্ত দেয়া নিষেধ।

আবার যারা অনিরাপদ যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ এবং যারা মাদকাসক্ত তাদের রক্তও কোনভাবেই গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়া ৬ মাসের মধ্যে যাদের শরীরে বড় কোন অস্ত্রপচার হয়েছে তাদেরও রক্তদান নিষেধ।

রক্তদান প্রক্রিয়া : আমাদের মধ্যে অনেকেই রক্ত দিতে ভয় পান। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ এবং নিরাপদ। এ প্রক্রিয়ায় সুঁই ফোটানো ছাড়া আর কোন ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

ইচ্ছুক ব্যক্তিরা যে কোন রক্তদাতা সংগঠনে বা কোন অসুস্থ রোগীকে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে অতি সহজেই রক্ত দিতে পারেন। এতে সময় লাগে সবোর্চ্চ ১০ মিনিট।

তবে খালি পেটে বা ভরপেটে কখনোই রক্ত দেয়া ঠিক নয়। তাই রক্তদানের আগে অবশ্যই হালকা কোন খাবার খেয়ে নেয়া উচিৎ।

রক্তদান শেষে তাড়াহুড়ো না করে  কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া ও পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন।

ডাক্তাররা বলেছেন, একজন সুস্থ্য মানুষের দেহে সাধারণত ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদানের সময় সেখান থেকে নেয়া হয় মাত্র সাড়ে ৩শ’ এমএল। আর দানকৃত রক্তের প্রায় ৬০ ভাগ ১ দিনের মধ্যেই শরীর তৈরি করে নেয়। শুধু রক্তের লোহিত কণিকা পূরণ হতে ১২০ দিন বা ৪ মাস সময় লাগে।

কিভাবে রক্তের গ্রুপ জানবেন : রক্তদান করতে হলে বা নিজের নানান বিপদের কথা চিন্তা করে রক্তের গ্রুপ জানাটা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। রক্তের গ্রুপগুলো হলো

.    এবি নেগেটিভ
.    এবি পজেটিভ
.    এ নেগেটিভ
.    এ পজেটিভ
.    ও নেগেটিভ
.    ও পজেটিভ
.    বি নেগেটিভ
.    বি পজেটিভ


রক্তের এই গ্রুপ জানতে হলে দেশের যে কোন হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৫০ টাকার মধ্যে এটি নির্ণয় করা যায়। এছাড়া এখন অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনেক সময় স্কুল কলেজ বা নানা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি করে থাকে।

রক্তদানের সুবিধা : ডাক্তাররা বলেন, প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আরও দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান হৃদরোগেরও ঝুঁকি কমায়। আবার রক্তদানের মধ্যে দিয়ে মনেও আসে প্রশান্তি।

জরুরি প্রয়োজনে কোথায় রক্ত পাবেন : সরকারি হাসপাতালগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে এখন জরুরি প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানি, বাঁধন অন্যতম।

জেনে রাখা ভালো : রক্তের প্রয়োজনে এই ঠিকানাগুলো আপনার জেনে রাখা ভালো।

•    এ্যাপোলো হাসপাতাল প্লট-৮১, ব্লক-ই, বসুন্ধরা আ/এ, ফোন-৮৪০১৬৬১।

•    ল্যাবএইড ব্লাড ব্যাংক, বাড়ি-১, সড়ক-৪. ধানমন্ডি, ফোন: ৯৬৭৬৩৫৬।

•    স্কয়ার হাসপাতাল, ১৮/এফ, পশ্চিম পান্থপথ, ফোন-৮১৫৯৪৫৭।

•    আদ-দ্বীন হাসপাতাল, মগবাজার ফোন-৯৩৫৩৩৯১।

হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে, প্রয়োজনে রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকে।

•    বাঁধন- ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৮৬২৯০৪২।

•    কোয়ান্টাম- ১/১ পাইওনিয়র সড়ক, কাকরাইল,-৯৩৫১৯৬৯।

•    সন্ধানী- ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখা, ৯৬৬৮৬৯০।

•    রেড ক্রিসেন্ট-৭/৫ আওরঙ্গজেব সড়ক, মোহাম্মদপুর-৯১১৬৫৬৩।

বাংলাদেশ সময় : ১০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১0, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।