ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মিটফোর্ড থেকে ৩ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন উধাও, বহাল তবিয়তে অভিযুক্তরা!

শামসুল ইসলাম সনেট, কেরানীগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
মিটফোর্ড থেকে ৩ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন উধাও, বহাল তবিয়তে অভিযুক্তরা! আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, মো. মাসুদ রানা ওরফে সুমন ও বিল্লাল হোসেন

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের তিনটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন উধাও হ‌য়ে যাওয়ার ঘটনার সত‌্যতা পাওয়ার পরও বহাল ত‌বিয়‌তে র‌য়ে‌ছেন অভিযুক্তরা। যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী তদন্ত ক‌মি‌টি‌কে তথ‌্য প্রমাণ দি‌য়ে সহায়তা ক‌রে‌ছেন, তা‌দের নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

 ফলে তারা কর্মস্থলে আসছেন না।

জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন‌টি নতুন আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন উধাও হ‌য়ে যায়। গত বছ‌রের নভেম্বরে শেষ দিকে বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ‌্য ও প‌রিবার কল‌্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ‌্য অধিদপ্তর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন (দুদক) পৃথক তদন্ত ক‌মি‌টি গঠন ক‌রে। এসব ক‌মি‌টির ম‌ধ্যে স্বাস্থ‌্য ও প‌রিবার কল‌্যাণ মন্ত্রণালয় গ‌ঠিত তদন্ত ক‌মি‌টি দীর্ঘ অনুসন্ধান শে‌ষে ৭ এপ্রিল ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে অভিযুক্ত‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা নি‌তে সুপা‌রিশ সম্বলিত নি‌র্দেশনা জা‌রি ক‌রে চি‌ঠি দেয়। তিনটি মেশিন আত্মসা‌তের ঘটন‌া সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত ক‌মি‌টি জ‌ড়িত‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা নি‌তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ‌্য অধিদপ্তর‌কে সুপা‌রিশ ক‌রে।

স্বাস্থ‌্য সেবা বিভা‌গের সরকারি স্বাস্থ‌্য ব‌্যবস্থাপনা-১ শাখা থেকে উপ-স‌চিব মো. রোকন উদ্দিন স্বাক্ষ‌রিত ক‌য়েক‌টি সুপা‌রিশ সম্বলিত চিঠিতে নি‌র্দেশ দি‌য়ে বলা হয়, হাসপাতাল‌টির প্রধান সহকারী আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, রে‌ডিওল‌জি অ্যান্ড ইমে‌জিং বিভা‌গের অফিস সহায়ক মো. মাসুদ রানা ওরফে সুমন, তৎকালীন দা‌য়ি‌ত্বে থাকা ওয়ার্ড মাস্টার বিল্লাল হোসেনের সহায়তায় তিনটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় উল্লেখিত ব্যক্তি‌দের বিষ‌য়ে প্রশাস‌নিক অথবা বিভাগীয় ব‌্যবস্থা নেওয়া যে‌তে পা‌রে।

চি‌ঠির দ্বিতীয় কলা‌মে বলা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার সাজ্জাদ হো‌সেন ও বিল্লাল হোসেন প্রত‌্যক্ষ ও প‌রোক্ষভা‌বে জ‌ড়িত। তা‌দের কা‌ছে সংর‌ক্ষিত চা‌বি ছাড়া গোডাউন খোলা সম্ভব নয়। এজন‌্য ওই দুই ওয়ার্ড মাস্টারকে শা‌স্তির আওতায় আনা যে‌তে পা‌রে। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ‌কে স্বাস্থ‌্য ও প‌রিবার কল‌্যাণ মন্ত্রণালয় থে‌কে জা‌রিকৃত কন‌ডেমনেশন নী‌তিমালা স‌ঠিকভা‌বে অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া যে‌তে পা‌রে।  

কারণ হি‌সে‌বে বলা হয়, আত্মসাৎ হওয়া মেশিনগু‌লোর স‌ঙ্গে কেনা ল‌জিক পি-৫ জিই হেলথ কেয়ার ইউএসএ মডেলের আরেক‌টি মেশিন হাসপাতা‌লে সচল র‌য়ে‌ছে বিধায় এমন নি‌র্দেশনা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া গোডাউ‌নে প্রবে‌শ মু‌খে একা‌ধিক সি‌সি ক‌্যা‌মেরা স্থাপন, জমাকৃত মেশিনপা‌তির তা‌লিকা, পর্যাপ্ত আলোর ব‌্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নি‌শ্চিতকর‌ণে কর্তৃপক্ষ‌কে নি‌র্দেশনা দেওয়া যে‌তে পা‌রে ম‌র্মে মত দেওয়া হয়।  

চি‌ঠির ৫ নম্বর কলা‌মে বলা হয়, মেশিন মেরাম‌তের কা‌জে নির্ভর‌যোগ‌্য প্রতিষ্ঠান‌কে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সু‌বিধা‌ভোগী ব‌হিরাগত ইঞ্জি‌নিয়াররা যেন হাসপাতা‌লে ঢুকতে না পা‌রেন, সে বিষ‌য়ে প্রয়োজনীয় ব‌্যবস্থা নেওয়ার জন‌্য হাসপাতাল প‌রিচালক‌কে নি‌র্দেশ দেওয়া যে‌তে পা‌রে ব‌লে উল্লেখ করা হয়।  

সূত্র বল‌ছে, তদন্ত ক‌মি‌টির চিঠি হাসপাতা‌লে আসার পর থে‌কে মেশিন আত্মসাতকারী চক্রটি তদন্ত ক‌মি‌টি‌কে সহায়তাকারী কর্মকর্তা কর্মচারী‌দের নানাভা‌বে ভয়ভী‌তি ও হুম‌কি দি‌চ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গে‌ছে।  

নাম প্রকা‌শে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, ক‌য়েক‌দিন থে‌কে তদন্ত ক‌মি‌টির কাছে সাক্ষ‌্য দেওয়া একা‌ধিক কর্মচারীকে দে‌খে নেওয়ার হুম‌কি দিয়ে আস‌ছেন অভিযুক্তরা। তা‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা নেওয়ার সুপা‌রিশ করা হ‌লেও অদৃশ‌্য ক্ষমতায় তারা এখনও বহাল ত‌বিয়‌তে র‌য়ে‌ছেন। চক্রটির কবল থে‌কে হাসপাতালটি রক্ষারও দা‌বি জানান তারা।

এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আলী হাবীব বাংলানিউজকে চি‌ঠি পাওয়ার সত‌্যতা স্বীকার ক‌রে বলেন, এখ‌নও অভিযুক্ত‌দের বিরু‌দ্ধে কোনো ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়‌নি। স্বাস্থ‌্য অধিদপ্ত‌রের স‌ঙ্গে পরামর্শ ক‌রে ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।  

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ সালে ওয়ারসি সার্জারিক্যাল থেকে লজিক পি-৫ ইউএসএ নামে দু’টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ক্রয় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০১৫ সা‌লে চীন সরকা‌রের উপহার বাবদ জিই হেলথ কেয়ার, উহান, চায়না নামে আরেক‌টি মেশিন হাসপাতা‌লের রে‌ডিওল‌জি অ্যান্ড ইমেজিং বিভা‌গে স্থাপন ক‌রে সেবা দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৭ সা‌লে দু’টো মেশিন নষ্ট হয়ে যায় বলে জা‌নানো হয়। মেশিন দু’টি প‌রিত‌্যক্ত ঘোষণা কর‌তে  হাসপাতাল পরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়। য‌দিও নিয়ম ও চু‌ক্তি অনুযায়ী মেশিনগু‌লোর লাইফ টাইম ১০ বছর ধরা হয়। সে অনুযায়ী মেশিনগু‌লো যথাক্রমে ২০২৩-২৪ ও ২৫ সা‌লে প‌রিত‌্যক্ত হওয়ার কথা। প‌রে ২০১৮ সা‌লে ওইসব মেশিন সু‌কৌশ‌লে প‌রিত‌্যক্ত মালামা‌লের গোডাউ‌নে রে‌খে দেওয়া হয় এবং ২০২১ সা‌লে মেশিনগু‌লো ১ কো‌টি টাকায় বি‌ক্রি ক‌রে দি‌য়ে তদন্তস্থ‌লে ভাঙারি দোকান থে‌কে অন‌্য যন্ত্রের খোলস গোডাউনে রে‌খে দেওয়া হয়। বিষয়‌টি নি‌য়ে হাসপাতাল‌টি‌তে চাঞ্চ‌ল্যের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।