ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল

১২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২ শতাধিক রোগী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
১২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২ শতাধিক রোগী

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে কোনোভাবেই কমছে না ডায়রিয়ার প্রকোপ। সাপ্তাহজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২ শতাধিক আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি আছে ২ শতাধিক রোগী। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও কারণ অনুসন্ধানে জেলা সিভিল সার্জন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দা, জরুরি বিভাগ, ওষুধ ও টিকিট কাউন্টারের সামনের মেঝেতে এমন কি হাসপাতাল চত্বরে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় ও ময়লা ড্রেনের পাশে চলছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।

রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে আকস্মিকভাবে অতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য গত ১২ এপ্রিল রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন কর্তৃক ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে জেলা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. শামীম আহসানকে সভাপতি, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুর রহমানকে সদস্য সচিব, মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু হানিফ, জেলা সদর হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন ডা. কানিজ ফাতেমা ও উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. সেলিম মিয়াকে সদস্য করা হয়েছে।

জেলা সদরের বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা মো. বাবু জানান, গতরাতে আমার স্ত্রী ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরেক ডায়রিয়া রোগী শেফালী বেগম জানান, আমার ছোট শিশু মেয়ে গত ২ দিন আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করি। মঙ্গলবার ডাক্তার আমাদের ছুটি দিয়ে দে। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাই। রাতে আবারও মেয়ে অসুস্থ হলে বুধবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কোথাও জায়গা না পেয়ে গাছ তলাতে চিকিৎসা নিচ্ছি।

গোয়ালন্দ উপজেলার বাসিন্দা আলম মোল্লা জানান, আমি রাজবাড়ী বাজারে সবজি আড়তে কাজ করি। গতকাল রুটি খাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। এখন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ফ্লোরে জায়গা পেয়েছি।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনতি রায় চৌধুরী জানান, বর্তমানে রোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে ১২টি ও মেঝেতে ১০টি শয্যার ব্যবস্থা আছে। তবে বেড সংখ্যা কম থাকলেও ওষুধপত্র পর্যাপ্ত আছে। সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, রাজবাড়ীতে গত কয়েকদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে মেঝেতেও বিছানা করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত স্যালাইন ও নার্সরা আছে।

তিনি আরও জানান, কেউ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে পানি শূন্যতা যেন না হয় এজন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। তবে কোনো রোগীর পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে। রোগীর সংখ্যা বেশি হলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন জানান, গত ৩ দিন পর্যন্ত আড়াইশ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধান ও চিকিৎসা প্রদানে মেডিক্যাল টিম ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশম সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।