ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী জাবেদ জাহাঙ্গীর। সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ায় মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এর আগে বুধবার (০৮ জুন) সন্ধ্যায় এই বিস্ময়কর দৃশ্যের দেখা মেলে ঢামেক হাসপাতালে। এদিন মুমূর্ষু জাবেদের মাথার ক্ষতস্থানে সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নূরে আলম। আহত জাবেদ হবিগঞ্জের লাখাই সদর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুরুল হক।
আহতের ভাই তোফায়েল আহমেদ বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে হবিগঞ্জ জেলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হন জাবেদ। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বিকেলের দিকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া য়। এরপর ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নিউরো সার্জারি বিভাগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী তাকে একই বিভাগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।
তোফায়েল আরও জানান, ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরতরা তার ভাইয়ের মাথায় আগের হাসপাতালের করা ব্যান্ডেজ পর্যন্ত খুলে দেখেননি। মুমূর্ষ অবস্থায় ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানে কোনো সিট খালি না থাকায় ফ্লোরে রাখা হয়। পরে লোকজনের অনুরোধে অল্প বয়সী একটা ছেলে এসে জাবেদের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেখতে পান- ক্ষতস্থানে কোনো সেলা দেওয়া হয়নি। তখন সেই অল্প বয়সী ছেলেটি জাবেদের মাথায় সেলাই করেন এবং ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেন।
নূরে আলম নামের সেই ব্যক্তি জানান, তিনি নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। এই বলে দ্রুত ওয়ার্ড থেকে সরে পড়েন তিনি।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, নিউরো সার্জারি বিভাগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড হচ্ছে জরুরি রোগীদের জন্য। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিউরো সার্জারির যে কোনো রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে ওই ওয়ার্ডে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ময় প্রকাশ করেন ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ওই রোগী স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, সেটা ঠিক আছে। তবে আমাদের এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীর ক্ষতস্থানের অবস্থা দেখতে হবে। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে। এরপর সিটি স্ক্যান। তিনি এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।
নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সদের ইনচার্জ সঞ্জয় বলেন, নূরে আলম নামে এক ব্যক্তি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে। তবে এই কাজটি খুবই অন্যায় হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, যেভাবেই হোক ওই ঝাড়ুদারকে খুঁজে বের করা হবে। এ ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। যারা রোগীর সেবায় অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আহতের ভাই তোফায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বুধবার দিনগত রাতে ঢামেক হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি না পাওয়ায় তাকে মহাখালীর একটি হাসপাতালের নেওয়া হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জাবেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এজেডএস/এনএসআর