খুলনা: খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিনের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুমেকে সাঁড়াশি অভিযান চলায় র্যাব-৬ ও খুলনা জেলা প্রশাসন।
অভিযানে ৩২ দালাল ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে আটক করা হয়। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে র্যাবের পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দালাল চক্র ঘিরে থাকে খুমেক হাসপাতাল। চিকিৎসক, কর্মচারী ও দালালদের সমন্বয়ে হাসপাতালে তৈরি হয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে রোগীদের কাছ থেকে।
তারা বলেন, সরকারি এ হাসপাতালে ওষুধ-পথ্যসহ অপারেশন সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এতে রোগীরা চিকিৎসক, কর্মচারী ও দালালদের মাধ্যমে হাসপাতালের আশপাশে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পছন্দের প্যাথলজি কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট অপ্রতিম কুমার চক্রবর্তী জানান, খুলনা মেডিক্যালে রোগী আসলে দালালরা তাদের ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালের অভ্যন্তরে পাওয়া যায়। এদের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগীরা হচ্ছেন প্রতারিত। এসব অপরাধের কারণে গ্রেফতার ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ১৪ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাশ দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।
র্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোশতাক আহমদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আমাদের একটি মৌলিক চাহিদা। নাগরিক তার স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। স্বাস্থ্যসেবা যখন পাল্টে যাচ্ছিল তখনও দালাল চক্র নাগরিকের গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা করছিল। হাসপাতাল ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড় পরিসরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। দালল চক্রের সদস্যদের আটক করতে সক্ষম র্যাব। বিভিন্ন বিচার বিশ্লেষণ করে ৩২ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণে যে বাধা দেবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সামনে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
এমআরএম/এমজেএফ