ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার সময় দেলোয়ার হোসেন (৫৫) নামে এক রোগীর ঘাড়ে স্ক্রু লাগানোর কথা বলে ৩৫ হাজার টাকা নিলেও পরবর্তীতে সেখানে কোনো স্ক্রু লাগানো হয়নি। এরকম প্রতারণার অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী রোগীর ছেলে আজিজুল হাকিম একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এই বিষয়ে কথা হয় রোগী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আজিজুল হাকিমের সঙ্গে।
তিনি জানান, তার বাবা দেলোয়ার হোসেনের ঘাড়ের হাড়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে ওনাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিউরোসার্জারির ইয়েলো ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেনকে ১৭ আগস্ট হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচতলায় ১০৫ নাম্বার ওটিতে অস্ত্রোপচার করে। অস্ত্রোপচারে আগে চিকিৎসক জানান রোগীর ঘাড়ের হাড়ে একটা স্ক্রু লাগাতে হবে যার দাম ৩৫ হাজার টাকা। পরে অস্ত্রোপচার শেষে একজন লোক এসে মনির সার্জিক্যাল নামের একটা মেমো দিয়ে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। নিউরোসার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা. পীযুষ কান্তি মিত্র নির্দেশক্রমে সেই লোকটাকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ডা. পীযুষ তাকে বলেন, হাসপাতালে অনেক বাটপার আছে। সাবধানে টাকা পয়সা দিবেন। এবং মেমো ছাড়া কোনো বিল দিবেন না।
তিনি আরো জানান, পরে ৩০ আগস্ট হাসপাতাল থেকে রোগী দেলোয়ারকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর আগে হাসপাতালেই এক্সরে করে দেখা যায় আমার বাবার ঘাড়ে কোনো স্ক্রু লাগানো হয়নি। পরবর্তীতে এই বিষয় ডা. পীযূষ কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বীকার করেন, অস্ত্রোপচারের সময় দেলোয়ার হোসেনের ঘাড়ে স্ক্রু লাগানো প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তীতে সমস্যা হলে লাগানো হবে।
ডা. পীযুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় তার স্বজনদের টাকা সঙ্গে রাখতে বলি। রোগী দেলোয়ারের অস্ত্রোপচারের সময় স্ক্রু লাগানো প্রয়োজন হয়নি। ওই জায়গাটা টিউমারের মত দেখা দিয়েছে সেখানে পুঁজ ছিল। আমরা সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে ড্রিল করেছি। ওই সার্জিক্যালের বিল ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। যেটার মেমো দেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় স্ক্রু প্রয়োজন হয়নি সেটা ঠিক আছে। স্ক্রুর নাম করে যেই টাকা নিয়েছে সেটা রোগীকে ফেরত দেওয়া উচিত ছিল। যে কোম্পানির মেমোতে ৩৫ হাজার টাকা লিখে রোগীর স্বজনদের কাছে জমা দিয়েছে। সে কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের বিল হয়েছে ৬০০০ টাকা। সেই ডা. জোর করে তাদের লিখিয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ২৯ হাজার টাকা সে রেখে ছয় হাজার টাকা কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসক পীযূষ বলেছে টাকা ফেরত দেবে।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডে জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। যদি তদন্ত কমিটির প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেটাও করা হবে।
তবে হাসপাতালের একটি সূত্র জানান, ওই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডা. পীযুষের কাছে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. পীযুষ জানিয়েছেন স্ক্রু লাগার কথা ছিল, অস্ত্রোপচারের সময় সেটার প্রয়োজন হয়নি। কোম্পানি টাকা নিয়েছে সেটা তারা ফেরত দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২
এজেডএস/কেএআর