ঢাকা: ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণে উদ্বিগ্ন হলেও দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, আমরা সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো আছি।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ৪র্থ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় একথা জানানো হয়।
এসময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদুল্লা খন্দকার, ওযাসার চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলেও ২০২০,২১ ও ২২ সালসহ এই তিন বছর আমাদের সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় আমরা সফলতা অর্জন করলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছেতে পারিনি। বর্তমানে আবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের পর আমরা ক্লাস্টারভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর প্রতিটা ওয়ার্ডকে ১০ জোনে ভাগ করে কাউন্সিলরকে প্রধান করে কমিটি করে দিয়েছি। এরপর ওইসব এলাকায় কি পরিমাণ মশা নিধনের জন্য ওষুধ লাগবে তা নির্ণয় করে তা আমদানি করা বা মজুদ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনবল সংকটছিলো একদিনে ৩ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে ফগার মেশিন ছিলে না সেখানে কেনার জন্য ত্যাৎক্ষণিকভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে এক কোটি থেকে ৭ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের প্রতিশেধক আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেরয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। জনগণকে সব কাজে অংশগ্রহণ করা দরকার।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমাদের আজকে সভাটি ডাকার উদ্দেশ্য হলো, যতো কম সংখ্যক লোক আক্রান্ত হোক অন্য দেশের তুলনায়, মৃত্যু হলে তা আমাদের ব্যথিত করে। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন।
পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব সিদ্ধান্ত দৃশ্যমান ও বাস্তবায়ন করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে বসার মূল কারণই এটা। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোথায় কোন নতুন কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা। তারা যদি কাজ না করতেন তাহলে আজকে যে ফিগারটা দিলাম সেটা আসতো না। আমরা যে কাজ করছি তার বড় সফলতা হচ্ছে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো আছি। তার মানে আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বর্তমানে ঢাকায় করোনার চেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, করোনায় আমরা সফল বলে ডেঙ্গুতে অসফল সেটা প্রমাণ করা যাবে না। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ডেঙ্গুতে ভালো করছি। জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৩৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। ভারতে ১২ জন, ফিলিপাইনে ৩১৯ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৪০ জন, ভিয়েতনামে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে কি আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আত্মতুষ্টির বিষয় নয়। আমরা ব্যথিত, দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন, যে কারণে আজকে এখানে বসা। নইলে তো হঠাৎ করে এক মাসের ব্যবধানে আমাদের এখানে বসার দরকার ছিল না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সাথে আমি কম্পেয়ার (তূলনা) করেছি এ কারণে, আমাদের অবস্থান এবং তাদের দেশের অবস্থান (কি)। সিঙ্গাপুরের মত দেশ কি চেষ্টা করে না? ভিয়েতনামের মত দেশ কি চেষ্টা করে না? ফিলিপাইনের মত দেশ, তাদের দেশের ইনকাম আমাদের থেকে বেশি। সে সমস্ত কারণে আমরা এই তুলনাটি করেছি।
সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনগুলো মানুষের জন্য কল্যাণকর।
হকাররা হাঁটা চলার পথ এবং রাস্তার ওপর দোকান বসায়- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা এখন বসে না, ১৯৯০ অথবা ১৯৯১ সাল থেকে বসে। তবে এটাকে আমরা সমর্থন করি না। ফলে মেয়র সাহেবরা এখানে উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
জিসিজি