ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেক হাসপাতাল

পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগের সামনে রাতভর অপেক্ষা বৃদ্ধার!

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগের সামনে রাতভর অপেক্ষা বৃদ্ধার!

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বয়স্ক এক নারী প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরের দিন সকাল পর্যন্ত। কোনো উপায় না পেয়ে বহুদূর থেকে আসা ওই দরিদ্র বৃদ্ধাকে পেটে ব্যথা নিয়ে জরুরি বিভাগের স্টোমাক ওয়াশরুমের সামনে পার্টি বিছিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

রোববার (৬ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্টমাক ওয়াশ রুমের সামনের ফ্লোরে এই দৃশ্য দেখা যায়।

ওই বৃদ্ধার নাম মরি মজুমদার (৭০), বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় শেনদীয়া গ্রামে। এ সময় তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পেটে ব্যথা নিয়ে একটি প্লাস্টিকের পার্টিতে শুয়ে থাকতে  দেখা যায়।

তিনি জানান, তার স্বামী হরিপদ মজুমদার অনেক আগেই মারা গেছেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। হাসপাতালে তার সঙ্গে অবস্থান করছেন পুত্রবধূ তপস্বী মজুমদার, নাতী সুকুমার মজুমদার এবং এক আত্মীয় অসীম সরকার।

সুকুমার মজুমদার জানান, তার ঠাকুরমা (দাদি) বেশ কয়েকদিন যাবৎ জরায়ুতে সমস্যার পাশাপাশি তীব্র পেটের ব্যথায় ভুগছেন।   এ কারণে রোববার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে ঠাকুর মাকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বিকেল তিনটার দিকে হাসপাতালে এসে পৌঁছাই।

তিনি আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী জরুরি বিভাগের কাউন্টার থেকে ঠাকুরমার নামে ১০টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেনা হয়। তারপর রোগীকে সেই টিকিটসহ জরুরি বিভাগের এক নম্বর রুমে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে, তিনি পাশের ৭ নম্বর রুমে রেফার করেন।   সেখানে কর্তব্য চিকিৎসক ঠাকুমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং টিকিটে এ কিছু ওষুধ লিখে সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে বহির্বিভাগে দেখাতে বলেন।

তখন ডাক্তারকে অনুরোধ করে বলি, আমরা গরিব মানুষ, মাদারীপুর থেকে এসেছি। ঢাকা শহরে আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমাদের রোগীকে ভর্তি দেন। তখন ওই  চিকিৎসক বলেন, তার কিছু করার নেই, আপনারা সোমবার সকালে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাবেন।

তিনি আরও বলেন, কী আর করা, যেহেতু সোমবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হবে। তখন প্রায় সন্ধ্যা হওয়ায় আর মাদারীপুরে ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না।  তাই ঠাকুরমাকে নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করছি। প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেওয়া ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি  ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠাকুরমার পেটের ব্যাথা এখনো চলমান আছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য এসে প্রাথমিক চিকিৎসা পেলাম। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে একটি রাত।

এদিকে ৭ নম্বর রুমে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সকাল ৮ থেকে রাত ৮ পর্যন্ত এখানে জেনারেল সার্জারির জুনিয়র চিকিৎসকরা অবস্থান করেন। মেডিকেল অফিসারের পাঠানো রোগীদের তারা দেখে থাকেন। তবে রোগীর ভর্তির প্রয়োজন হলে তারা ওয়ার্ডের রেফার করেন। কিন্তু এই বয়স্ক রোগীকে সকালে বহির্বিভাগে না পাঠিয়ে ভর্তির ব্যাবস্থা করে দিতে পারতেন। কারণ হাসপাতালের বহির্বিভাগ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাছাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ চিকিৎসকদের হাতে।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে এখিই জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে কথা বলছি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।