কলকাতা: সবার আগে দেশ। দেশ থাকলেই রাজনৈতিক দলগুলো থাকবে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে মমতা জানিয়েছেন, ‘জি-২০ সভাপতিত্ব কোনো একটি দলের এজেন্ডা নয়, বরং গোটা দেশের সম্মানের বিষয়। তা যেন অক্ষত থাকে। ’
জি-২০ সম্মেলনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বৈঠকে মমতার স্বরে সুর চড়িয়েছেন জাতীয় কংগ্রেসসহ ভারতের অন্যান্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীরা।
আসন্ন সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা থাকবেন। ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী ‘অতিথি নারায়ণ’। আর তাই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূরে রেখে বিশ্ব দরবারে ভারতের সম্মান রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সব সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজক হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন মমতা।
চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর ঘোষণা হয়েছে, ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবে দেশটি। আগামী সেপ্টেম্বরে হবে মূল সম্মেলন। বছরজুড়ে এই সংক্রান্ত নানান কর্মসূচি রয়েছে। কলকাতা ও শিলিগুড়ি মিলিয়ে মোট চারটি সম্মেলন সম্পন্ন করার দায়িত্ব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের কাঁধে।
ভারতের পর্যটন গন্তব্য হিসেবে যেসব জায়গা বাছাই করা হয়েছে, তাতে নাম রয়েছে শিলিগুড়ি ও কলকাতার। জি-২০ এর মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অংশ হওয়ায় বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের নাম আরও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হবে, যা উপলব্ধি করেছেন স্বয়ং মমতাও। আয়োজক হিসেবে বাংলা যে গর্বিত, রাষ্ট্রপতি ভবনের বৈঠকে সেকথা জানিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি।
তবে সম্মেলনে ‘পদ্মফুল-কেন্দ্রিক’ লোগো নিয়ে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেছেন মমতা। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ইস্যু করতে চাই না, তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, ভাবা উচিত। পদ্মফুলের জায়গায় ময়ূর, বাঘ, সিংহ কিছু একটা লোগো দেওয়া যেতেই পারত। প্রসঙ্গত, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতীক ‘পদ্মফুল’।
বৈঠকে অংশ নিয়ে জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, সম্মেলনকে যেন রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা না হয়। বেকারত্ব যেভাবে বাড়ছে, যেভাবে ধর্মীয় বিভেদের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, তা মাথায় রাখা উচিত। না হলে জি-২০ সম্মেলনে অন্য দেশের কাছে মাথা নত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। জানিয়েছেন, এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজক হওয়াটা কোনও রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নয়। এটা গোটা দেশের এবং দেশবাসীর সম্মান।
আজ (মঙ্গলবার) রাজস্থান গিয়েছেন মমতা। সেখানে আজমির শরিফ দর্শন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর পুষ্করে ব্রহ্মামন্দিরে পূজা দেবেন। বুধবার নয়াদিল্লি ফিরে দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তৃণমূল নেত্রী। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কোন কোন ইস্যুতে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে হবে বা কোন ইস্যুতে দল কী অবস্থান নেবে- সেসব নিয়েই রণকৌশল নির্ধারণ করে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই নয়াদিল্লি সফরে আছেন তার ভাইপো তথা তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই রাজনৈতিক দিক থেকে মমতা-অভিষেকের একসঙ্গে এই দিল্লি সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
ভিএস/আরএইচ