ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভারত

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ, আদানির নামে মামলার শুনানি পেছাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ, আদানির নামে মামলার শুনানি পেছাল

কলকাতা: বাংলাদেশে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজকর্ম নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার পরর্বতী শুনানি আগামী ২০ ফেব্রয়ারি। গত ৩১ জানুয়ারি মামলাটি হয়েছিল।

তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলাকারী, এপিডিআর নামে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন ও মুর্শিদাবাদ জেলার ৩৫ জন ফল চাষী। সংগঠনের কর্মী রণজিৎ সুর বলেন, আজকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে আমাদের মামলার শুনানি ছিল। তবে খুব দুর্ভাগ্যজনক একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো।  

আদানি গ্রুপের আইনজীবীরা বলেছেন, ওনারা নাকি এই মামলার অভিযোগে কপিই (পিটিশন) পাননি। তারা নাকি খালি খাম পেয়েছেন। অথচ একই পদ্ধতিতে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারসহ অন্যান্য যারা পার্টি আছেন তাদের সবাইকে একইভাবে পিটিশন পাঠানো হয়েছে। সবাই পেয়েছেন, ওনারা পাননি বলে আদালতে দাবি করেছেন। আদানির সর্বভারতীয় সংস্থা (আমেদাবাদ) এবং ঝাড়খণ্ডের তাপবিদ্যুৎ (গোড্ডা) পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের দাবি মেনে নিয়ে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ দিয়েছেন।

বাদি পক্ষের বক্তব্য, এটা দেরি করার কৌশল। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে লড়াই আরো শক্তিশালী হবে। মাঠে যারা কৃষক আছেন তারা মাঠে আন্দোলন আছেন। আর আমরা আদালতে কৃষকদের সঙ্গে যৌথভাবে আছি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেছেন, ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে চলতি বছরের মার্চ মাসে এবং পরে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে এপ্রিলে। বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাকারীর আইনজীবী ঝুমা দাস জানান, খবরটা আমরাও দেখেছি। সে কারণেই তো আমরা বিচারপতির কাছে এর স্থগিতাদেশ চাইছি। আমরা পরবর্তী শুনানিতে ফের বিচারপতির কাছে আবেদন করব। মূল বিষয় হলো- প্রথমত, নিয়ম মেনে হাইটেনশন লাইন পড়ুক, দ্বিতীয়ত, কৃষকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পাক। আর যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবারাহে স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) দিক আদালত।

যে কৃষকদের জমি এবং চাষের গাছের ওপর দিয়ে হাইটেনশন তার গেছে তাতে চাষের জমি, গাছের ক্ষতি এবং কৃষকদের জীবনের একটা ঝুঁকি থাকছে। তারা তো আর নিজেদের গ্রাম ছেড়ে অনত্র যেতে পারবে না। ফলে তাদের মামলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। চাষীদের জীবন এবং জীবিকার ক্ষতি হচ্ছে। তারা সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এই নিয়েই আমাদের মামলা।

প্রসঙ্গত, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় আদানি গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ওপর দিয়ে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর জন্য ঝাড়খন্ডে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েছে আদানিরা।

মুর্শিদাবাদের যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে এই হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানে আম ও লিচুর বাগান থাকায় প্রবল আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা। সম্প্রতি এই নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের একাধিকবার বাদানুবাদ এমনকি খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে।

কৃষকদের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা থানায় বেলিয়া গ্রামের বেশিরভাগ চাষী আম ও লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। এলাকায় যেদিকে খালি জমি পড়ে রয়েছে সেদিক দিয়ে হাইটেনশন তার গেলে তাতে তাদের কোনো আপত্তি ছিল না। বাগানের ওপর দিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তারের কারণে আদানিরা প্রচুর গাছ কেটে ফেলেছে। এতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি। উল্টো পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা।  

সেসব চাষীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এপিডিআর নামে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন। মমতার প্রশাসন কর্পোরেটদের জমি লুটের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। প্রশাসনকে বলে কোনো কাজ না হওয়ায় এবার তারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩
ভিএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।