ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হলো ‘বাংলাদেশ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হলো ‘বাংলাদেশ’

কলকাতা: কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হলো বাংলাদেশ বিষয়। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ বিভাগে বাংলাদেশ সম্পর্কে পড়ানো হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি স্মরণ করে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রয়ারি) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের করিডোরে স্থাপন করা হলো ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ফলক’।

‘মৈত্রী সম্পর্ক’ নামাঙ্কিত ফলকটি উন্মোচন করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান (এইচওডি) ইমন কল্যাণ লাহিড়ী, অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্র, বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের প্রেস শাখার প্রথম সচিব রঞ্জন সেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সেই সঙ্গে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস জানান, দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অর্ধশতক পূরণ হয়েছে। সেটাকে কেন্দ্র করেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ওপর একটা ফলক লাগানো হয়েছে। আজকে সেই ফলকটির উন্মোচন হলো। এরকম একটি উদ্যোগ নেওয়ায় এবং তাতে আমাদেরকে শামিল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও জানান দুই দেশ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা শুধু ইতিহাস বা রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে নয়, তার মূলে রয়েছে দুই দেশের সংস্কৃতি, দুদেশের মানুষের মনন, হৃদয়ের বন্ধন। রাজনীতিতে দুই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বিশেষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে সেটাও বড় ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে আরও ভালো কাজ করব। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যে অসামান্য অবদান রাখছে সেজন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যমণ্ডিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু নামাঙ্কিত চেয়ার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে কাজ করছি। উপাচার্যর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এ বিষয়ে দু’দেশেরই সদিচ্ছাটা রয়েছে। আমরা আশাবাদী যে এ ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে পারবো। বঙ্গবন্ধু চেয়ার হয়ে গেলেই বাংলাদেশ থেকে কোন বড় মাপের একাডেমিক স্কলার বা শিক্ষাবিদ এখানে আসবেন, গবেষণা করবেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে ক্লাস নেবেন।  

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ বিভাগে প্রধান ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বঙ্গবন্ধুর মতো একজন রাজনীতিবিদ, যিনি শুধু দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে একটা রাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষমতা রাখেন। আমরা এটা মনে করি যে, বঙ্গবন্ধুকে গঙ্গা বা পদ্মার পাড়ে আটকে রাখা যায় না। বঙ্গবন্ধু হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। তার জীবনী আমাদের শিক্ষার্থীদের বেশি করে পড়া দরকার। তার যে ধর্মনিরপেক্ষতা তত্ত্ব রয়েছে তা নিয়ে আমাদের বাঙালিদের অহংকার করা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে যদি নতুন করে প্রজন্মরা জানতে পারেন, আমার মনে হয় তাতে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি করে উপকৃত হবেন।

তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদীর আন্দোলনের সূত্র ধরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। অপরদিকে, বাংলাদেশও দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফলস্বরূপ স্বাধীনতা অর্জন। আমরা মনে করি, ভারতের শিক্ষার্থীদের যদি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়তে হয়, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, তবে তার সূত্রটা বাংলাদেশ। সেজন্য ফলকটা আমরা লাগিয়েছি বিভাগে ঢোকার মুখে। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। এই ফলকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই বিভাগের জন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশভিত্তিক একটা স্পেশাল পেপার আছে, যেটা স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। এছাড়া আমাদের পাঠ্যসূচিতে যাতে বঙ্গবন্ধুকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, সেটা নিয়েই কথাবার্তা চলছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাংবাদিক রক্তিম দাস বলেন, একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম যখন উত্তাল। সে সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিশাল একটা ভূমিকা ছিল। তৎকালীন শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে পথে নেমেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর আর্থিক তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল। যে কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেদিক থেকে এই বিভাগের প্রধান ইমন কল্যাণ যে কাজটা করেছেন নিঃসন্দেহে খুবই উল্লেখযোগ্য। তবে আরো আগে শুরু হলে ভালো হতো, এখন অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তারা দেখতে পাবেন, এখানে একটা ফলক আছে, তাতে আগ্রহ তৈরি হবে। তবে তারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে যাদবপুরের কি সম্পর্ক ছিল? তা নিয়ে গবেষণা করেন তাহলে একটা নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।