ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কলকাতা বইমেলায় ইন্টারনেট দুর্ভোগ কমেনি এবারও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
কলকাতা বইমেলায় ইন্টারনেট দুর্ভোগ কমেনি এবারও

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): রাগ করে  বিক্রেতাকে এক ক্রেতা বলেই উঠলেন, ‘আপনাদের এ সমস্যা আর গেলই না। ’ ভারতের সবচেয়ে বড় বই উৎসব।

ফলে দেশি-বিদেশির ভিড়। বিদেশি এক টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি বিরক্ত হয়ে ফোনে তার অফিসকে জানাচ্ছেন, ‘ভেরি পুওর ইন্টারনেট, লাইভ কান্ট বি ডান হেয়ার। ’

কলকাতা বইমেলায় ইন্টারনেট সমস্যা একই রকম রয়ে গেছে। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে ২০১৮ সাল থেকে কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু প্রথম থেকেই এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক সমস্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেটওয়ার্কের উন্নতি হওয়ার বদলে ক্রমশ অবনতি হয়েছে। প্রতিবার পাঠকদের অভিযোগেও বইমেলায় বেহাল ইন্টারনেট। প্রতিদিনই এনিয়ে পাঠক-বিক্রেতাদের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

সাধারণ কলকাতায় ‘কিউআর কোড’-এর মাধ্যমে ডিজিট্যাল পেমেন্ট অভ্যস্ত শহরবাসী। ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ১৫ রুপির ফুচকা বিক্রেতা, শহরের নামিদাম শপিং মল, সিনেমা হল, স্কুল ভর্তির ফিস- সব জায়গাতেই দেখা যায় ছোট্ট কিউআর কোড। সেখানেই মোবাইল স্ক্যান করে ক্যাশলেস পেমেন্টে অভ্যস্ত মানুষ। এবারে গ্রাহকদের সুবিধার জন্য কলকাতা বইমেলার স্টলে স্টলে রয়েছে কিউআর কোড। কিন্তু সেই কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজার হাজার ক্রেতা। কারণ বইমেলা প্রাঙ্গণে মোবাইলের নেটওয়ার্ক কার্যত ‘মৃতপ্রায়’।

শুধু ক্যাশলেস পেমেন্ট কেন, সাধের বইমেলা দাঁড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়ারও উপায় নেই।   এমনকি, নেটের মাধ্যমে ফোনে কথা বলতে গেলে মেলা ছেড়ে যেতে হচ্ছে বাইরে। অথচ দেশ-বিদেশের অতিথিরা এখন আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন আসা যাওয়া করছেন।

এবারে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ৪৬ বছরে পদার্পন করেছে। এ বছরই প্রথম বইমেলা পেয়েছে স্থায়ী ঠিকানা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম দিয়েছেন ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ’। সবচেয়ে বেশি স্টল এবং প্রকাশক অংশ নিয়েছে মেলায়। ২০টি দেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ ৯০০ প্রকশনা সংস্থা ও ২০০টি লিটল ম্যাগাজিন অংশ নিয়েছে। আযোজকরাও ইন্টারনেটে বড় রকম পরিকল্পনা করেছিলেন। মেঘবালা নামে এক দামি কোম্পানিকে মেলা প্রাঙ্গণে টাওয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তা এবারও ফলপ্রসূ হয়নি।

কিন্তু, সেন্ট্রাল পার্ক অর্থাৎ বইমেলা প্রাঙ্গণে কেন এমন সমস্যা? পুলিশের কথায়, জ্যামার লাগানো থাকলে এই ধরনের সমস্যা হয়। কিন্তু, এখানে কোনো জ্যামার লাগানো নেই। এর প্রধান কারণ, বইমেলায় লাখ লাখ মানুষ হাজির হন। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির গ্রাহক। একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে একসঙ্গে এত মানুষের মোবাইল থাকায় নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি হ্রাস পায়। সেই কারণেই নেটওয়ার্কের সমস্যা। যেমনটা অনেক সময় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে। এছাড়া সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় জনবসতিও অপেক্ষাকৃত কম। সেই কারণে ওই এলাকায় স্বাভাবিক সময়েই ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকে। ফলে লোক বেড়ে গেলে নেটওয়ার্কের সমস্যা থেকে যায়।

যদিও বইমেলা প্রাঙ্গণের বাইরে একটি অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়েছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সমস্যা রয়েই গেছে। সর্বত্রই দুর্ভোগের চিত্র, হতাশ বইপ্রেমীরা। হাওড়া থেকে আসা সহেলি নন্দী জানালেন, আড়াই হাজার রুপির বই কিনে, ক্যাশলেস পেমেন্ট করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর পেমেন্ট করতে সক্ষম হই। লাখ লাখ রুপির বই কেনাবেচা যেখানে হচ্ছে, সেখানে এটা একটা বিরাট সমস্যা। আর এর দায়িত্ব আয়োজকদেরকেই নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।