ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

আজীবনের জন্য খারিজ করে দিন, আমি থামব না: রাহুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
আজীবনের জন্য খারিজ করে দিন, আমি থামব না: রাহুল

কলকাতা: ‘সারা জীবনের জন্য আমার সদস্যপদ বাতিল করে দিন কিংবা জেলে ভরে দিন, আমাকে ভয় দেখানো যাবে না। আমি শুধু সত্য নিয়ে চিন্তিত।

সত্য প্রকাশ করাই আমার কাজ। আমি যদি সংসদ সদস্য নাও থাকি বা আমাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাও আমি এই একই কাজ করে যাব। ’

লোকসভার সদস্য পদ খারিজ হওয়ার পরদিনই কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিকদের কাছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

শনিবার (২৫ মার্চ) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাহুল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মোদি পদবী মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তিনি বক্তব্য, আমার নাম সাভারকর নয়, আমার নাম গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইব না। গান্ধীরা ক্ষমা চায় না।

এদিনও আদানি ইস্যুতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, আমি এসবে ভয় পাই না। ওরা আজও আমাকে বুঝতে পারিনি। এভাবে আমাকে ভয় দেখানো যাবে না। এভাবে আমাকে আটকানো যাবে না। আদানি ইস্যু থেকে নজর ঘোরানো যাবে না। আমি বারবার প্রশ্ন করব, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্ক কী? এটা পুরনো সম্পর্ক, মোদি-আদানির বন্ধুত্ব পুরনো। নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকে এই বন্ধুত্ব। কীভাবে আদানির ঝুলিতে ২০ হাজার কোটি রুপি এলো? সেই অর্থ কার? এই অর্থভান্ডার আদানির নয়, তাহলে কে বিনিয়োগ করলো?

এরপরই রাহুলের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যাচার করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের এই নেতা। তিনি বলেন, আমি ইংল্যান্ডে দেশবিরোধী কিছুই বলিনি। আমার বলা কথাকে বিকৃত করে পেশ করা হয়েছে।

সবশেষে বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেছেন, আমি গণতন্ত্রকে বাঁচানোর লড়াইতে নেমেছি। আমি সত্য ছাড়া আর কিছুতেই আগ্রহী নই। সংসদে থাকি আর না থাকি, আমি লড়াই থামাব না। এটা আমার রক্তে আছে।

গুজরাটের সুরাট আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। এই মামলায় জামিন পেলেও সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়েছে ২০১৯ সালে কেরলের ওয়ানাড় কেন্দ্র থেকে জয়ী রাহুলের। নিম্ন আদালতের এই রায় যদি উচ্চ আদালতে বহাল থাকে তাহলে আগামী ৮ বছর নির্বাচনে লড়তে পারবেন না সোনিয়াপুত্র। সেক্ষেত্রে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধীকে ছাড়াই ভোটে নামতে হবে কংগ্রেসকে।

অপরদিকে, ২ বছর কারাদণ্ড এবং জেল থেকে মুক্ত হয়েও ৬ বছর নির্বাচনের লড়তে পারবে না, এই জনপ্রতিনিধি আইনকে অসাংবিধানিক বলে, তা খারিজের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন কেরলের এক বাসিন্দা। উচ্চ আদালত এই নিয়ে কী আদেশ দেয়, সেই দিকে তাকিয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহল। এবার এই ঘটনায় কোন দল লাভবান হয় সেটাই এখন দেখার।

প্রসঙ্গত, এই আইনের নেপথ্যে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই, দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এক যুগান্তকারী রায়। তার আগে আইন ছিল, দোষী সাব্যস্ত সাংসদ, বিধায়ক সদস্যদের সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা আসন বা পদ ধরে রাখার অনুমতি পাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত পাবেন, যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্টে ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন মনমোহন সিংয়ের সরকার সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। কিন্তু, সেই সময় অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল স্বয়ং রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসে রাহুল সমর্থকরাও এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। যার জেরে মনমোহন সরকার সেই অর্ডিন্যান্সটি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সে সময় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে গ্রেফতার করার কারণেই রাহুল বিরোধিতা করেছিলেন। সেই আইনেই সদস্য পদ গেছে রাহুলের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।