ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

আতিক হত্যাকাণ্ড: যোগীর পদত্যাগ চাইছেন বিরোধীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
আতিক হত্যাকাণ্ড: যোগীর পদত্যাগ চাইছেন বিরোধীরা

কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে রোববার (১৭ এপ্রিল) কবর দেওয়া হয়েছে রাজ্যসভার সাবেক এক সদস্য আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফের মরদেহ। তবে মৃতদের কবর দেওয়া গেলও এই হত্যার ঘটনাকে ধামচাপা দেওয়া যোগী রাজ্যের পুলিশের পক্ষে খুব একটা সহজ হচ্ছে না।

ঘটনার রাতে, শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজ্যটির নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব ধরা পড়েছে। যার জেরে বর্তমান বিরোধীরা তুলোধুনো করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগের দাবিতে সমস্বরে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পিছু ধাওয়া করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার রাতে যেখানে আতিক ও তার ভাইকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেখান থেকে হাসপাতালের দরজা ছিল মাত্র কয়েক হাত দূরে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৭ এপ্রিল) আতিক ও আশরাফের পুলিশ হেফাজত শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তাদের রাজ্যটির ধূমলগঞ্জ থানা থেকে পুলিশের পাহারায় কোলভিন হাসপাতালে রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল দুটি গাড়ি আর ২০ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী। হাসপাতাল থেকে থানার দূরত্ব ছিল মাত্র ৭ কিলোমিটার। যা মাত্র ২০ মিনিটেই অতিক্রম করেছিল পুলিশের গাড়ি। হাসপাতালের মধ্যে গাড়ি দাঁড় করানোর প্রচুর জায়গা থাকলেও কেনো পুলিশের গাড়ি হাসপাতালের দরজার বাইরে ডানদিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তা নিয়ে প্রশ্নই উঠেছে।

বিরোধীদের প্রশ্ন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন গাড়ি সরাসরি হাসপাতালে মূল প্রবেশদ্বারে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু, তা না করে গাড়ি দাঁড় করানো হলো ডানদিকে কেন?

ওই অঞ্চলের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আতিক ও আশরাফকে হাতকড়া পরিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানতেন আতিকদের হাসপাতালে আনা হবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, এরকম ওয়ান্টেড অভিযুক্তদের এত কাছে সাংবাদিকদের যেতে দেওয়া হলো কেন?

যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়ি থানা থেকেই পুলিশের পিছু নিয়েছিল। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আতিকদের বক্তব্য রেকর্ড করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু, আতিকরা প্রথমে বক্তব্য জানাতে চাননি। দু’পা এগোতেই ফের তাদের মুখের কাছে মাইক ধরা হয়। আতিকরা এক মুহূর্ত দাঁড়ানোর পর পুলিশের ধাক্কায় সামনের দিকে এগিয়ে যায় তারা। বিরোধীদের প্রশ্ন, অভিযুক্তদের পুলিশ ঘিরে না রেখে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে পুলিশ পিছনে ছিল কেন?

আতিকরা দুই-এক পা যাওয়ার পরে, সাংবাদিকরা তাদের ঘিরে ধরেন। প্রশ্ন করেন, কেন পুলিশের হাতে এনকাউন্টার হওয়া নিহত আতিকের ছেলে আসাদকে কবর দেওয়ার সময় তাদের দেখা গেল না? আর, ঠিক সেই সময়ই আতিক ও তার ভাইকে লক্ষ্য করে লাভলেশ তিওয়ারি, সানি পুরানে ও অরুণ মৌর্যরা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জ থেকে গুলি চালান। যদিও তারা সাংবাদিকের বেশে ছিলেন। সাথে ছিল বড় ক্যামেরা এবং মাইক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মত, গুলি চালানোর আগে অবধি বোঝা যায়নি তারা সাংবাদিক নয়, দুষ্কৃতকারী।

সব মিলিয়ে ২২ সেকেন্ডে ১৮ রাউন্ড গুলি চালান তিন দুষ্কৃতকারী। এরপর তারা পালিয়ে না গিয়ে পুলিশের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। স্বভাবত, এই সব ঘটনার জেরে আতিক আহমেদের হত্যাকে ষড়যন্ত্র বলে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, যারা এই ধরনের কাজ করে বা যারা এই ধরনের কাজ করা ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেয়, তাদেরও দোষী করা উচিত। আর তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা উচিত। বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন যাতে সর্বদা অক্ষরে অক্ষরে সম্মানিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রয়েছে। তিনি এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে তদন্ত দাবি করেছেন। আসাদুদ্দিনের মতে, উত্তরপ্রদেশের কোনো অফিসারকে তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করাই উচিত নয়। কারণ, এটি একটি পরিকল্পনা মাফিক খুন।

গত ১৬ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, উত্তরপ্রদেশে নির্লজ্জ নৈরাজ্য এবং আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পতন দেখে হতবাক। এটা লজ্জাজনক যে, অপরাধীরা এখন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। পুলিশ এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতেই সব ঘটছে। আমাদের সাংবিধানিক গণতন্ত্রে এ ধরনের বেআইনি কাজের কোনো স্থান নেই।

বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

তবে পালটা সংঘ পরিবার (আরএসএস) এর দাবি, আতিক একজন মুসলিম বলেই ‘সেলুকার’ সেজে থাকা হিন্দু লোকজন যোগী সরকারকে নিশানা করছে। যখন পালঘরে সাধুদের নিগ্রহ করে হত্যা করা হয়, তখন এসব সেকুলার লোকজন একটাও কথা বলেনি। আতিক-কাণ্ডে যা ঘটেছে, তা একটা দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, এপিল ১৭, ২০২৩
ভিএস/এমজএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।