কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনা সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। রাজ্যের নিরিখে এত বড় দুর্নীতি কোনো ক্ষেত্রেই হয়নি।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বাংলা যাকে চেনে কালীঘাটের কাকু নামে। বলা হয়, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে নেত্রীর ভাইপো অভিষেকের সঙ্গে কালীঘাটের কাকুর সখ্য বেশি। সেই কাকু এখন ইডির হেফাজতে। ইডির অভিযোগ, তথ্য গোপন করা এবং তার একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩০ মে) দীর্ঘ সাড়ে ১২ ঘণ্টা জেরার পর রাত ১২টার পর ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু।
ইডির অভিযোগ, বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতিতে জেল হেফাজতে থাকা ৫ জন প্রভাবশালীর জেরায় কাকুর নাম উঠে আসে। তাদরে বয়ানের ভিত্তিতে এবং তথ্য গোপনের কারণে কালীঘাটের কাকুকে গ্রেফতার করেছে ইডি।
বুধবাবর (৩১ মে) সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের অন্তর্গত নগর দায়রা আদালতে সিবিআইয়ের স্পেশাল কক্ষের তোলা হলে ১৪ দিন ইডির রিমান্ডে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সুজয় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট দেওয়া হয়েছে। ইডির দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির ব্যাংকার তিনিই ছিলেন। বহু ডিজিটাল লেনদেনে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এদিন আদালতে ইডি চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের টাকা শাসকদলের এজেন্টরা তুলে জমা দিতেন তার কাছে। সেই কালো টাকা তিনি তার কোম্পানি দিয়ে সাদা করতেন। এরপর তা পৌঁছে দেওয়া হতো সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এই সুজয়কৃষ্ণই নির্দেশ দিতেন কাদের চাকরি দেওয়া হবে। সেই মতোই কাজ করত রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। সেসব তথ্য জেনে বুঝে গোপন করেছেন সুজয় কৃষ্ণ। তদন্তে আরও তথ্য উঠে আসবে বলে তাকে হেফাজতে নিয়েছে ইডি।
এ বিষয়ে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, কালীঘাটের কাকু অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন। তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে গেল ইডি, একেবারে মাথার কাছাকাছি, এবার কান টানলে মাথা আসবে।
বিরোধী এই নেতার দাবি, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্স’ কোম্পানির সিইও ছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, কোস্পানিটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কোম্পানিতে অভিষেকের স্ত্রীসহ মমতার পরিবারের অনেক সদস্য যুক্ত।
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, বাংলার আরও একটা দুর্নীতির ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মাননীয়া (মমতা), রাজ্যের ৬০টি পুরসভার ৫ হাজার চাকরি বিক্রি হয়েছে। সেই তদন্ত আটকাতে বারেবারে দিল্লি গেছেন। ২০২২ সালে মমতা, কেজরিওয়াল (দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী) সহ ৯টি দল এসবের বিষয়ে ইডির তদন্ত আটকাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তবে শীর্ষ আদালত ইডির পক্ষে রায় দিয়েছেন। তদন্ত আটকাতে কারা যায়, যারা দুর্নীতিতে জড়িত থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, কাকাবাবু এখন জালে, খোকাবাবুর কী হবে? এবার খোকাবাবুর পালা। তবে প্রকাশ্যে নাম না নিলেও খোকাবাবু বলতে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বোঝাতে চেয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি।
রাজ্যবাসী বলছেন, নাম সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র, তাহলে তাকে কালীঘাটের কাকু বলে কেন ডাকা হতো? কাকু যখন আছে নিশ্চয়ই তাহলে ভাইপোও আছে? তিনি নিশ্চয়ই কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা এমন ফিগার যাকে ‘কাকু’ বলে ডাকা হয়ে আসছে অনেকদিন ধরে। তার সাগরেদরা তাকে কাকু বলে ডাকেন। কার নির্দেশে কাজ করতেন কাকু? এই নিয়োগ দুর্নীতিতে সর্বশেষ সুবিধাভোগী কে বা কারা? রাজ্যবাসীর সাথে ইডি-ও এখন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ