ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে মিলছে না গঙ্গার ইলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে মিলছে না গঙ্গার ইলিশ

কলকাতা: বাংলাদেশে যেমন পদ্মার ইলিশের খ্যাতি আছে তেমনই পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কার ইলিশও প্রসিদ্ধ। সাধারণত রাজ্যটির মালদা জেলার কাছে গঙ্গার ইলিশ বলতে এই ফারাক্কার ইলিশকেই বোঝায়।

স্বাদে, গন্ধে ফারাক্কার ইলিশের স্বাদ প্রায় পদ্মার ইলিশের সমান। সে কারণে ফারাক্কার ইলিশের চাহিদাও ব্যাপক। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার ইলিশের দামও থাকে চড়া। তবে ফারাক্কার ইলিশ মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে যে ইলিশ ওঠে তা দুই জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা মেলে কলকাতায়। ফলে বর্ষা শুরু হতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে ফারাক্কার ইলিশের চাহিদা।

কিন্তু, এ বছর বর্ষা শেষের মুখে। তবুও সেই অর্থে দেখা নেই মহার্ঘ্য এই মাছের। স্বভাবতই, হতাশ সে অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা। ইলিশের আশায় রোজ জাল, নৌকা নিয়ে গঙ্গার বুকে পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। ৩-৪ দিন পর হয়তো কখনো একটা, কখনো তার বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাও আবার ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের মধ্যে। এক কেজি কিংবা তার উপরের ইলিশ দুষ্প্রাপ্যই বলা চলে।

মালদা জেলার কালিয়াচকের এক মৎস্যজীবী রতন হালদার বলেছেন, ‘বর্ষা এখন মধ্য গগনে। অথচ দেখা নেই ইলিশের। সারাদিন গঙ্গায় পড়ে থেকেও ইলিশ মিলছে না। মিললেও খুব ছোট ছোট। ’

মৎস্যজীবীরা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এই বর্ষা মৌসুমের জন্য। এই সময় ইলিশের দেখা মেলে। কিন্তু, এবার ভরা বর্ষাতেও দেখা নেই গঙ্গার ইলিশের। পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা ঘাটে ঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করে বসে থাকছেন। কিন্তু পচ্ছেন না ইলিশ।

বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গায় বাড়তে থাকে পানি। তখনই পর্যাপ্ত দেখা মেলে ফারাক্কার ইলিশের। আর সেই ইলিশের ওপর ভরসা করে এই সময়টায় দুটো বাড়তি অর্থ দেখেন কালিয়াচক ৩ ব্লকের কয়েক হাজার জেলে। সংশ্লিষ্ট ব্লকের গঙ্গার পাড় ঘেঁষে রয়েছে হোসেনপুর, সুজাপুর, দিয়ারা, ভাঙ্গা টোলা, চকবাহাদুরপুর, কুলি দিয়ারা, পারলালপুর গ্রাম। এসব গ্রামের সিংহভাগ বাসিন্দা মৎস্যজীবী। তবে ভাঙ্গা টোলা, সুজাপুর, দিয়ারা মৎস্যজীবীর সংখ্যাটা বেশি।

অন্য সময় মাঝেমধ্যে দু-একটা ইলিশ মিললেও বর্ষা মৌসুম ইলিশের আদর্শ সময়। এবার এসব মৎস্যজীবদের জালে ধরা দিচ্ছে না গঙ্গার রুপালি ফসল। ফলে সমুদ্র, মোহনার ইলিশের ওপরই নির্ভরশীল ব্যবসায়ী থেকে বঙ্গবাসী। মাঝে পূজার মৌসুমে চাতকের মতো চেয়ে থাকেন বাংলাদেশ সরকারে উপহারস্বরূপ ইলিশের দিকে। যদিও বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, মধ্যস্থতাকারীরা বাংলার নামে ইলিশ এনে সিংহভাগ পাঠিয়ে দেয় ভিনরাজ্যে।

তবে এই সময়টায় রাজ্যে ফারাক্কার ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এবারও দামও তাই আকাশছোঁয়া। খুচরা বাজারে ৪০০ গ্রাম ইলিশের প্রতি কেজি দাম ৬০০ রুপি। ৪০০-৫০০ গ্রাম ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার রুপিতে। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ফারাক্কার ইলিশ ১৬০০ রুপি এবং কস্মিনকালে এক কেজি বা তার কাছাকাছি ইলিশ মিললেও, দাম ২৬০০ রুপির বেশি।

কালিয়াচক-৪ নম্বর ব্লকের মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মঙ্গলচন্দ্র সরকার বলেন, এখন টুকটাক ইলিশ উঠছে, একসময় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মৎস্যজীবীরা এই সময়টায় ইলিশ ধরার জন্য গঙ্গায় ভিড় জমাত। এখন গঙ্গায় ইলিশের আকাল। গঙ্গার পানির স্তর বাড়লেও স্রোত তেমন নেই। তাই হয়তো সেই অর্থে ইলিশের দেখা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।