কলকাতা: কলকাতার কলেজ স্কয়ারে পর্দা উঠলো বাংলাদেশ বইমেলার। লাল-সবুজ রঙের ফিতে কেটে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) এ মেলার ১১তম আসরের উদ্বোধন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এসময় অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টির সভাপতি গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিদুল হক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, কলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর রায়, সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ডেপুটি হাইকমিশনের বাণিজ্য শাখার সচিব শামসুল আরিফসহ বিশিষ্টজনেরা।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, বই মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী। ডিজিটাল যুগেও বইয়ের কদর কমেনি। বই মানুষের সহযাত্রীর মতো। ফেসবুক-টুইটারের আগমনে বৈশ্বিক যোগাযোগ বেড়েছে ঠিকই। মানুষ এখন সেলফিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বইতে লেখকের সই বা আইকনের সই দুই মলাটের মধ্যে রাখতে এখনো বাঙালি ভালোবাসে। একটা আলাদা আবেগ কাজ করে আমাদের মধ্যে। বই কে পড়ছে বা না পড়ছে, তাতে বইয়ের কিছু আসে যায় না। তবে মানবসভ্যতা যতদিন থাকবে বই থেকে যাবে। এজন্য বইয়ের প্রতি রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ভর্তুকি থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র যেমন অন্যান্য বিষয় সংরক্ষণে বিশ্বাস করে, তেমনি ডিজিটালের পাশাপাশি দুই মলাটে বই এবং তার লেখক যেন টিকে থাকে, তার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ-পশ্চিমবাংলার সম্পর্ক নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। সেই সম্পর্কের প্রতিফলন বাংলাদেশ বইমেলা। আমার দেখে ভালো লাগছে, ১০ দিনের এই বইমেলায় এখন থেকেই এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বলা যায়, বাংলাদেশ বইমেলা পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক জগতে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এজন্য বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা একটা চারাগাছের মতো রোপণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৩ বছরে এটা মহীরূহে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বইয়ের যেমন চাহিদা আছে, পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের কাছে বাংলাদেশের বইয়েরও চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটাই প্রাপ্তি।
বিজয় মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশের বইমেলা কলকাতায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। বইয়ের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষ যত যোগাযোগ তৈরি হবে তত দুই দেশ সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের বাণিজ্য শাখার সচিব শামসুল আরিফ বলেন, দুই দেশের স্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতীক বাংলাদেশ বইমেলা। সেই প্রতীক হিসেবে এই মেলায় দুই বাংলার প্রথিতযশারা অংশ নেন। আমি মনে করি ডিজিটাল যুগে তথ্য যেখানে মানুষের নখদর্পণে, সেখানে আজও বই আমাদের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে।
কলকাতা বইমেলার সভাপতি সুধাংশুশেখর রায় কলকাতাবাসীর উদ্দেশে বলেন, যেসব বই পাঠকরা খুঁজছেন, তা বাংলাদেশ বইমেলায় না পাওয়া গেলে মিলবে কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্মিলিত উদ্যোগে গত ১৩ বছর ধরে এই নগরে বাংলাদেশ বইমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। মাঝে করোনার দুই বছর বাদ দিয়ে এবার ১১তম আসর বসেছে। বইমেলায় অংশ নিয়েছে ৬৫টি বাংলাদেশি প্রকাশনা সংস্থা।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রকাশকের ১০০টি করে প্রকাশিত বই আসতে পারবে মেলায়। ফলে সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৫০০ নতুন বই আনা হয়েছে কলকাতাবাসীর জন্য।
মেলার উদ্বোধন শেষে ভাষা চেতনার আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করা হয়। তাতে প্রথম দিন অংশ নেন লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন এবং কিংবদন্তি বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম। তাদের পরিবেশনা মেলা প্রাঙ্গণে সৃষ্টি করে এক ভিন্ন আবহের।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩
ভিএস/এইচএ/