ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

তদন্তে এসে হামলার শিকার ইডির কর্মকর্তারা, পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
তদন্তে এসে হামলার শিকার ইডির কর্মকর্তারা, পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়

কলকাতা: ভারতে সংসদ (লোকসভা) নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে পশ্চিবঙ্গ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা তদন্তে এসে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অনুসারীদের হামলার শিকার হয়েছেন।

আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার খবরে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছেন, রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অবিলম্বে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ করা উচিত। রাজ্যের বিরোধী নেতা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যদিও শাসকদলের বক্তব্য, বিজেপির নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তদন্তের নামে উসকানি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। বর্তমানে রেশন দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন বালু। তারই তদন্তে রাজ্যজুড়ে জোরদার তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। সেই রেশন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগণার জেলার সন্দেশখালিতে রক্ত ঝরে ইডি কর্মকর্তাদের। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের এক নেতার অনুসারীদের হামলায় মাথা ফেটে গেছে এক তদন্তকারী কর্তার। জখম হয়েছেন আরও দু’জন। ইডি সূত্রের খবর, মাথা ফেটে গুরুতর জখম হওয়া ইডির কর্মকর্তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি কর্মকর্তার একটি দল। সঙ্গে ছিল সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীও। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই জেলার সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির দিকে তারা যাওয়ার চেষ্টা করলেই রুখে দাঁড়ায় শাসকদলের অনুসারীদের একাংশ।

ইডি কর্মকর্তারা তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ মেলেনি। এরপরেই তারা দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সেই সময়েই তাদের ঘিরে ফেলে মারধর করা হয়। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের। শেষমেশ ধাওয়া করে ইডি কর্তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়। ভাঙচুর করা হয় তাদের গাড়ি। সেই সময়েই তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা জখম হন।

এদিন একই সঙ্গে ইডির একটি দল বনগাঁ পুরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতেও হানা দিয়েছে। ইডির আভিযোগ, শঙ্কর এবং শাহজাহান, দু’জনেই সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই হামলার ঘটনায় মুখ খুলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ইডির আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তর থেকে বর্ণনা শুনে পুলিশের ভূমিকা জানতে চেয়েছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, পুলিশ কী করছিল, পুলিশ কি ঘটনাস্থলে যায়নি? 

তিনি আরও বলেন, রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না যে, রাজ্যের সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। দুজন অফিসারকে মেরেছে, ২০০ জনকে পাঠান। এরপরই এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি।

অপরদিকে, ইডি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ঘটনার ছবি এবং ভিডিও নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (এনআইএ) দিয়ে তদন্তেরও দাবি তুলেছেন তিনি। সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে ধরে এক্স-এ শুভেন্দু লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে ঠেকেছে। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে হামলা মুখে পড়তে হলো ইডি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। এ ঘটনার ভিডিও তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ট্যাগ করে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। সেই বার্তায় তিনি জুড়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, ইডির অধিকর্তা এবং সিআরপিএফকেও।

যদিও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, তাদের নাজেহাল করতে বিজেপির নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তদন্তের নামে উসকানি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালের ওই ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।