কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে চলছে লোকসভা ভোটের প্রচারণা। আর সেই নির্বাচনী প্রচারে শনিবার (২৭ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল জেলার কুলটির জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী দিনে আমরাই দেশ চালাব।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সাত ধাপের মধ্যে সবেমাত্র দুই ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। তাতেই বিজেপি ভয় পেয়ে গেছে, ঘাবড়ে গেছে! তাই প্রধানমন্ত্রীর মুখে বারে বারে বিভাজনের কথা আসছে। কিন্তু আপনারা (বিজেপি) যতই এসব চান, বাংলায় আমরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন হতে দেব না। পশ্চিমবঙ্গে বিহারি-বাঙালিকে আলাদা হতে দেব না।
আসানসোল-উত্তর আসন থেকে এবারও তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। তৃলমূলের এই প্রার্থী প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আমাদের আসানসোল উত্তরের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। সারা দেশে সবাই যাকে সম্মান করে। যার ভারতরত্ন পাওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি, ওনার এবং অমিতাভ বচ্চন দুজনের পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাদের কোনদিন এই সরকার সম্মান দেয়নি। কিন্তু আমি সম্মান দিয়ে বাংলায় নিয়ে এসেছি।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর আমলে বিজেপির টিকিটে জয় পেয়ে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী ছিলেন শত্রুঘ্ন। পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। এরপর রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। ২০১৯ সালে আসানসোল থেকে বিজেপির টিকিটে জয় পান সঙ্গীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়ো। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরি হতেই ২০২০ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল। ছেড়ে দেন সংসদ সদস্যের পদ। এরপরই আসনসোল লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হয়। সেখানেই তৃণমূল শক্রঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করে। জয় পান এই অভিনেতা। যদিও স্থানীয়দের অভিমত, অভিনেতাকে সেভাবে পাওয়া যায় না আসানসোলে। নেহাত বিহারি অধ্যুষিত অঞ্চল তাই বিহারি অভিনেতার সমর্থন বেশি।
তবে এদিন দলনেত্রী শত্রুঘ্ন সিনহার সুনাম করার পাশাপাশি বিজেপির উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন। জনসভা থেকে নেত্রী বলেছেন, এত মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি কোনদিন দেখিনি। খালি মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে। এরকম জুমলা বাজ (ভুয়া) পার্টি আমি কোনদিন দেখিনি। খালি বাংলার বদনাম করে বেড়াচ্ছে। ওরা বাংলার বদনাম করবে আর দেশ বিক্রি করবে। এনআরসি করতে চাইছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড চাইছে। সিএএ বানিয়ে ফেলেছে।
জনতার উদ্দেশে মমতা বলেন, এই অঞ্চলের কেউ আসানসোলে থাকে, কেউ দুর্গাপুরে থাকে, কেউ কুলটিতে থাকে, কেউ রানীগঞ্জে থাকে। আমরা এই জন্যই কোনদিন এনআরসির পক্ষে নই। কারণ আমরা কাউকে তাড়িয়ে দিতে চাই না। কিন্তু বিজেপি সরকার এনআরসি নিয়ে আসতে চাইছে। সিএএ তো নিয়েই চলে এসেছে। মোদির একটাই কাজ, সবাইকে ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়া। ওর দেশ বাঁচানোর কোনো ইচ্ছে নেই। ওরা ধর্ম বিক্রি করে দিচ্ছে, ওরা জাতি বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই মাথা ঠান্ডা করে একটু ভাবুন তারপর তৃণমূলকে ভোট দিন।
মূলত পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল অঞ্চল এখন বিহারিদের দখলে। এই অঞ্চলকে ছোট বিহার বললেও ভুল হবে না। আর তাই শনিবারের (২৭ এপ্রিল) জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা বাদ দিয়ে পুরোটাই হিন্দিতে প্রচারণা করলেন। একই সাথে বাংলা আর বিহার আলাদা নয়, তাও বুঝিয়ে দিলেন। তিনি বলেছেন, যারা বাংলা থেকে বিহারি তাড়াতে চাইছেন, তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ