নিউটাউন থেকে: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে সোমবার (২৭ মে) আবারও জোর তল্লাশি চালাচ্ছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম। এদিন সকালে আবার আরেকবার সঞ্জীভা গার্ডেনের ৫৬ বিইউ ফ্লাটে অনুসন্ধান চালায় দুই বাংলার গোয়েন্দা টিম।
ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, তল্লাশি শেষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সবকিছুই বিস্তারিত বলবেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে গোয়েন্দা সূত্রে এই ঘটনার আরও নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে।
পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজ তিনজনের ছিল। এরমধ্যে কসাই জিহাদের কাজ ছিল শরীর থেকে মাংস আলাদা করে কিমা আকারে টুকরো করা, হাড় অতিমাত্রায় ছোট করা এবং মাংসগুলো ফেলা। অপরদিকে নেপালে পলাতক সিয়ামের দায়িত্ব ছিল, হার এবং মাথার খুলি অন্যত্র ফেলা এবং এই দুইজনকে পরিকল্পনা দিয়েছিলেন তৃতীয় একজন। তবে সেই তৃতীয় ব্যক্তিটি ভারতীয় না বাংলাদেশি তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের মতে, ১৩ মে রাতে হত্যা থেকে ১৪ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কিমা করা মাংসের টুকরোর বেশিরভাগ অংশ ফ্ল্যাটের টয়লেট কমোডে ফ্ল্যাশ করা হয়েছে। অপরদিকে, হাড়গুলোর ছোট টুকরো ফেলা হয়েছে খালের বিভিন্ন অংশে। কিন্তু গত কয়েকদিন খালে পানি বেশি থাকায় এবং দুইদিনের টানা দুর্যোগের কারণে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না।
তবে পুলিশ এবং বাংলাদেশ গোয়েন্দা টিম ধারণা করছে, ঘটনার রাতে মাথা টুকরো করা হয়নি। তবে কসাই জানিয়েছে, মুখ যাতে চিনতে না পারা যায় সে জন্য মাথার ছাল তুলে ফেলা হয়েছিল এবং সেটি পশ্চিমবঙ্গের যশোরের কোনো অংশে দাফন করা হয়েছে অথবা কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আর পলাতক সিয়াম অথবা তৃতীয় সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি এই কাজ করেছেন। তবে তাদের ধরা এখনও সম্ভব না হওয়ায় সেই তথ্য উদ্ধার হচ্ছে না।
সেই সঙ্গে জানা যাচ্ছে, এমপি আনারের পরনে থাকা জামাকাপড় টয়লেট রুমে পুড়িয়ে তা ফ্ল্যাশ করা হয়েছে। তবে এখনও এসব তথ্য দুই বাংলার পুলিশের সূত্রে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
গতকালই কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ বলেন, লাশের অংশবিশেষ ছাড়া মামলার নিষ্পত্তি ঘটানো যাবে না। এ কারণে আমাদের মূল উদ্দেশ্য লাশের দেয়াংশ উদ্ধার করা। এরপরই কলকাতার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন দেশের গোয়েন্দা টিম।
এরপর সেখান থেকে বাংলাদেশ টিম পৌঁছায় নিউটাউন থানায়। সেখানে থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কল্যাণ ঘোষের সঙ্গে কথা বলন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। ২০ মিনিট পর নিউটাউন থানা থেকে বের হন প্রতিনিধি দল। সেখান থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটানো সঞ্জিভা গার্ডেন আবাসনের বিইউ ৫৬ ফ্ল্যাটে যান বাংলাদেশের গোয়েন্দা দল। সেখানে নানা দিক পর্যবেক্ষণ করেন ফ্ল্যাট ছাড়েন ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট পর। সেখান থেকে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তারা পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সদর দফতর ভবানী ভবন। সেখানে সিআইডি প্রধান ড. আর রাজা শেখরণ, আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী প্রমুখ পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দাদের সঙ্গে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
এরপর বাংলাদেশ টিম দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ চালান কসাই জিহাদকে। ৩ ঘণ্টা পর তারা বের হন ভবানী ভবন থেকে। পরে রোববার ডিবিপ্রধান হারুন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সব জানাবো একটু সময় দিন। তদন্তের কাজ চলছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আছেন, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাহেদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
ভিএস/এফআর