কলকাতা: একদিকে দুপুরের চড়া রোড, অন্যদিকে ভোটের উত্তেজনা। এই দুইয়ের মাঝে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভোট ম্যানেজারদের জন্য রয়েছে এলাহী খাবারের আয়োজন।
ভোট ম্যানেজার বলতে তাদের বোঝায় হয় যারা সক্রিয় রাজনৈতিক দলের কর্মী। এরা কেউ প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে বুথের ভেতরে ভোটের কাজকর্ম দেখেন। কেউ কেউ বাইরে থেকে এজেন্টকে সাহায্য করার কাজ করেন। কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের দলের ভোটারদের ডেকে নিয়ে আসেন। কোন ভোটার যদি না এসে থাকেন তবে তার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেটা জানতে তার বাড়িতে হাজির হন।
এছাড়াও ভোট কেন্দ্রের থেকে দূরে ক্যাম্প অফিস বানিয়ে এরা ভোটারদের সাহায্য করে থাকেন। এই ভোট ম্যানেজাররা লক্ষ্য রাখেন সঠিকভাবে ভোট হচ্ছে কি না। দরকার হলে এরা প্রার্থী অথবা নির্বাচন কমিশনকে তার রাজনৈতিক দলের হয়ে অসুবিধার কথা জানান। মোদ্দা কথায় এরা দলের হয়ে ভোট করান।
ভোটের দিন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন প্রার্থী। লাল মাটির দেশ বীরভূমে কর্মীদের সঙ্গে ভোটারদেরও গুড় বাতাসা দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ভোটারদের গুড় বাতাসা দেবার কথা বলায় শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাচন কমিশনের নজরবন্দি হতে হয়েছিল।
তবে ভোটারদের না দেয়া হলেও বিধান নগরের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের জন্য তৈরি হয়েছে বিরিয়ানি। রীতিমত বিধান নগরের এক বিখ্যাত দোকান থেকে আনানো হয়েছে সেই বিরিয়ানি। ঐ প্যাকেটগুলি দুপুরে পৌঁছে গেছে কর্মীদের হাতে হাতে। ভোট করানোর ফাঁকে বিরিয়ানি দিয়েই দুপুরের খাওয়া সারছেন কর্মীরা। কিছু কর্মী ব্যস্ত রয়েছেন অন্য কর্মীদের জন্য খাবার প্যাকেটজাত করার কাজে।
দমদমের বিভিন্ন কেন্দ্রে অবশ্য মেন্যু কিছুটা ভিন্ন। গরম অনেক বেশি তাই সেখানে ভাতের সঙ্গে থাকছে মুরগির মাংসের ঝোল। কোথাও আবার ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে চিলি চিকেন। মধ্যাহ্ন ভোজনই নয়। প্রাতঃরাশে কোথাও দেওয়া হয়েছিল স্যান্ডউইচ আবার কোথাও পরোটা ঘুগনি। সঙ্গে অবশ্যই ছিল মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা। মাঝেমাঝে চা- কফি তো আছেই। সঙ্গে চলছে ঠাণ্ডা পানীয়, সিঙ্গারা, লাড্ডু ইত্যাদি।
অনেক জায়গাতেই রাজনৈতিক দলের নেতারা কর্মীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে রেখেছেন গ্লুকোজ। বিধান নগরের জোট প্রার্থী অরুণাভ ঘোষের প্রধান এজেন্ট রমলা চক্রবর্তী। তিনি প্রয়াত বাম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী। বহুদিনের ভোট করানোর অভিজ্ঞ এই নেত্রী তার কর্মীদের জন্য গুরুপাক খাবারের ব্যবস্থা করেননি। তবে কিছুটা মুখরোচক না হলেও চলে না। তাই ক্যাটারার সংস্থাকে তিনি বলেছেন সাদা ভাত আর চিলি চিকেনের ব্যবস্থা করতে।
অন্য দিকে হেভিওয়েট প্রার্থী সুজিত বসু তার কর্মীদের জন্য রেখেছেন সাদা ভাত আর মুরগির ঝোলের ব্যবস্থা। সঙ্গে থাকছে আলু ভাজা এবং টক দই। এক সময় বাম কর্মীদের বাড়ি থেকে মহিলা সদস্যরা হাতে বানানো রুটি করে ভোট কর্মীদের খাবার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু বাম দলগুলোও এখন দোকানে অথবা ক্যাটারার সংস্থাকে খাবারের বরাত দিচ্ছেন। এমটাই জানালেন বিধান নগর এলাকায় বামফ্রন্টের এক প্রবীণ কর্মী।
তবে দমদম এলাকার বাম প্রার্থী পলাশ দাস সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই দলীয় কর্মীদের হাতেই খাবারের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। চতুর্থ দফার নির্বাচন ঘুরে দেখা গেল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিরোধ থাকলেও অনেক জায়গাতেই গাছের ছায়ায় একে অন্যের পাশাপাশি বসে দুপুরের খাওয়া সারছেন দুই বিরোধী দলের একাধিক কর্মী। গোলমালের বিভিন্ন অভিযোগের মাঝে এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা,২৫ এপ্রিল , ২০১৬
ভি.এস/আরআই