চিঠি হিসেবে বর্তমানে কেবলমাত্র টিকে কোনো কিছুর বিল, আইনি কাগজ বা নিমন্ত্রণপত্র।
এটিই স্বাভাবিক।
অনেকেই মনে করেন, চিঠি আদান-প্রদান বাতিল হয়ে যাওয়ায় তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে গতি বেড়েছে কয়েক হাজার গুণ। তা ঠিকই, কিন্তু হারিয়ে গেছে উষ্ণতা।
তবে আজও কিছু প্রবীণ মানুষ নববর্ষের চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া খানিকটা জোর করেই বজায় রেখেছেন। তাদের হাতের অক্ষরেই কোনোমতে টিকে আছে নববর্ষের চিঠি।
কি লেখা থাকতো নববর্ষের চিঠিতে? এ প্রজন্মের অনেকেই কোনোদিন নববর্ষের চিঠি হাতে পাননি বা লেখার সুযোগ হয়নি। তাদের জানাও হয়নি যে, এ চিঠি ছিলো আদতে একটি শুভেচ্ছাপত্র।
নববর্ষের প্রণাম বা শুভেচ্ছা, স্নেহ-ভালোবাসার আদান-প্রদান, প্রাণভরা আশীর্বাদ থাকতো প্রতিটি চিঠিতে।
আশির দশকের শেষ দিকে ও নব্বই দশকের শুরুর দিক পর্যন্তও নববর্ষের চিঠির প্রচলন ছিলো কলকাতায়। নতুন বছরের আগে বাড়ির গৃহকর্তা পোস্ট অফিস থেকে কিনে আনতেন বেশ কিছু পোস্টকার্ড। ছয় ইঞ্চি চওড়া ও তিন ইঞ্চি লম্বা পোস্টকার্ডে লেখা থাকতো কুশল বিনিময়ের সন্দেশ। বড়দের প্রণাম আর ছোটদের প্রতি থাকতো প্রাণভরা ভালোবাসা।
বাড়ির বড়দের সঙ্গে ছোটরাও সেখানে দুই-তিন লাইন লেখার সুযোগ পেতো। সেটি ছিলো ছোটদের বেশ বড় মাপের পাওয়া।
এ প্রসঙ্গে রবি ঠাকুরের চিঠি লেখার কথা আসতে বাধ্য।
কল্যাণীয়াসু রাণু।
......আজ আর বেশি লেখবার সময় নেই- কেননা আজ তিনটের গাড়িতেই রওনা হতে হবে। গাড়ি ফেল করবার আশ্চর্য ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু সে ক্ষমতাটা আজকে আমার পক্ষে সুবিধার হবে না। অতএব তোমাকে নববর্ষের আশীর্বাদ জানিয়ে, আমি টিকিট কিনতে দৌড়ালুম।
ইতি
শুভাকাঙ্ক্ষী শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কবিগুরুর রানু পরবর্তী সময়ে লেডি রানু মুখার্জি কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কবিগুরুর লেখা চিঠিতে লেখার সঙ্গে থাকতো নানা ধরনের শিল্পের ছোঁয়াও।
তবে নতুন বছরের পোস্টকার্ডেও যে শুধুই শব্দ লেখা থাকতো তা নয়, অনেক সময় পোস্টকার্ডে লেখার বদলে থাকতো ছবি। কাগজে লেখা চিঠিতেও অনেক সময়ই বিভিন্ন ধরনের ছবির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হতো।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
ভিএস/ওএইচ/এএসআর