ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

গোলাপের কাঁটায় রক্তাক্ত প্রেমিকের পকেট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
গোলাপের কাঁটায় রক্তাক্ত প্রেমিকের পকেট গোলাপ ফুল

কলকাতা: প্রেমের জন্য কি বিশেষ কোনো দিন লাগে? প্রেমিকার বাঁকা ঠোঁটের হাসি যেদিন প্রেমিকের হৃদয়ে সাড়া জাগায় সেদিনই তার প্রেম দিবস। তাই বছরের সব দিনই প্রেম নিবেদনের! কবির ভাষায়- ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।

গোলাপ ফুলপ্রেম নিবেদনে ফুল অতুলনীয় উপহার। আর প্রেমের ফুল মানেই যেন গোলাপ।

তাই তো গোলাপকে ডাকা হয় হরেক নামে। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, যতই সুবাস ছড়াক; কলকাতায় গোলাপের বাজার এখন দুর্মূল্য।  প্রতি পিস গোলাপের দাম ৫০ রুপি! অন্য সময় যার দাম থাকে দশগুণ কম।  ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে হৃদয় প্রেমের তীরে বিদ্ধ হোক বা না হোক, গোলাপের দামের কাঁটায় রক্তাক্ত হচ্ছে প্রেমিকের পকেট!

এ বছর রাজ্যে গোলাপের যোগান অফুরন্ত থাকলেও, চাহিদা চড়চড় করে বাড়ছে।  অন্যান্য সময়ের চেয়ে প্রায় বিশগুণ গোলাপের চাহিদা বাড়ে এ সময়টায়।  মূলত হাওড়া জেলার বাগনান ও উলুবেড়িয়া অঞ্চলে গোলাপ চাষ সবচেয়ে বেশি হয়।  আর সেই গোলাপ তিন মাস আগে থেকে মজুত করে রেখে দেওয়া হয় ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে।  

চলতি বছর হলুদ গোলাপের ফলন কম, তাই তার দাম আরও বেশি।  লাল গোলাপ বা ব্ল্যাক প্রিন্সের ফলন বেশি হলেও তার চাহিদা এখন আকাশ ছোঁয়া।  সে কারণে তার দাম খুচরো বাজারে কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউই জানে না।

বাগনান এলাকার ফুলচাষি পুলক ধর বলেন, এ বছর বিয়ের মওসুমেও আমরা গোলাপের দাম সেভাবে বেশি পাইনি।  এ বছর ফলন ভালোই হয়েছে।  গাছ লাগানোর পর ফুল ফুটতে এক বছর সময় লাগে।  আমরা বিশেষ দিনগুলোর জন্য আগে থেকেই গোলাপ মজুত করে রাখি।  সব চাষিরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র জন্য অপেক্ষায় বসে থাকে।  তারা এই গোলাপ বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখে এ সময়। সারাবছর গোলাপ চাষ করলেও লাভের মুখ খুব একটা দেখা যায় না।  

পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেল, প্রতি ১০০ পিস লাল গোলাপের দাম গড়ে এক হাজার।  হলুদ গোলাপের দাম চড়ছে ১৫শ’ রুপির কাছাকাছি। গোলাপ ফুল

চাষি পুলক ধরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, গোলাপ বেচে হাজার প্রেমের মিলন ঘটাচ্ছেন।  এ দিনে নিজেও কি একটা গোলাপ তুলে দেন নিজের প্রিয়তমার হাতে? হাসি দিয়ে জানান, শুধু ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন আমরা তো সারা বছরই গোলাপ তুলে দেই।  প্রেম এবং ব্যবসা একসাথেই হয়।  কারণ, আমরা চাষ করি আর ঘরের মহিলারা বাজার সামলায়।

প্রতি বছরই গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে এই সময়ে।  এ বছরও খুচরো বাজারে দাম যে বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  বসন্তকাল যে বাঙালি প্রেমের মাস তা কলকাতাবাসী ভুলে গেছে! ভুলে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ফাগুন মাসকে।  

পশ্চিমি আদলে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতেও যে একজন প্রেমের দূত এসে মানুষের মনের ফাগুনকে নাড়িয়ে দেয়, তা নব্বই দশকে ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ সিনেমার দৌলতে জেনেছিল সাধারণ ভারতবাসী।  তাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে’কে বাঙালির অন্যতম পার্বন বলাই চলে।  জাতি পশ্চিমি কায়দা জানুক তাতে ক্ষতি নেই।  কিন্তু ঋতুরাজ বসন্তকেও ভোলা উচিত নয়।  আজ যে ফাল্গুন মাসের শুরু কজন জানে। বাজার করতে এসে এমনই আফসোস করছিলেন প্রবীণ দীপঙ্কর দা।

সে যাই হোক তর্ক ছেড়ে ভালোবাসার দিনে প্রিয়জনের হাতে রুপালি রাংতায় মোড়া গোলাপ আর চকোলেট তুলে দিতেই হবে।  ভ্যালেন্টাইন্স ডের এটাই রীতি।  তাই গোলাপের দামের কাঁটায় পকেট থেকে যতই রক্ত ঝরুক না কেন, এদিন তো আর বারে বারে আসে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।