ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কৃত্রিম জিহ্বা বানিয়ে নতুন জীবন দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৯
কৃত্রিম জিহ্বা বানিয়ে নতুন জীবন দিচ্ছেন চিকিৎসকরা কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

কলকাতা: কৃত্রিম জিহ্বা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মূলত ক্যান্সার রোগীদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর চামড়া দিয়েই এই কৃত্রিম অঙ্গটি বানানো হচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে বললে, রোগীরই হাতের চামড়া নিয়ে পুনর্গঠন করা হচ্ছে জিহ্বার।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় ফ্ল্যাপ। এই ফ্ল্যাপ তৈরি করেই জিহ্বার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

কলকাতার আরজিকর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ গত দু’বছরে এমন সাতজন রোগীর কৃত্রিম জিভ তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন।

সব মিলে চিকিৎসকরা জিহ্বা ও মুখগহ্বরের অন্যান্য অংশের ক্যান্সারে ১৫ জনের বাদ যাওয়া অঙ্গ নতুন করে তৈরি করেছেন। ফলে কথা বলা ও খাওয়া- দু’ক্ষেত্রেই সুবিধা হচ্ছে রোগীদের।

জিহ্বার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ চুন, জর্দা, গুটখাসহ পানের অতিরিক্ত ব্যবহার। এছাড়াও যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে, সেরকম রোগীদের দাঁতের ধারালো কোথাও বারবার ঘষা লাগাও জিহ্বার ক্যান্সারের কারণ।

চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’। এছাড়া জিভ অত্যন্ত সচল অংশ বলে একবার ক্যানসার হলে, তা শুধু ওই অঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকে না। দ্রুতগতিতে সেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে দেহে। গলা থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্ত ছড়াতে পারে এই রোগ।

রোগীকে বাঁচাতে গিয়ে জিহ্বা ও ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ বাদ দিতে হয়। এমন রোগীদের জন্যই কৃত্রিম জিভ তৈরিতে মন দিয়েছে আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ।

কলকাতার এই হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য, প্লাস্টিক সার্জন ডা. গৌরাঙ্গ দত্ত, অ্যানেস্থেসিওলজির প্রধান ডা. গৌতম চৌধুরী প্রমুখ চিকিৎসকরা যুক্ত রয়েছেন এই জিহ্বা পুনর্গঠনের অপারেশনে।

বিভাগীয় প্রধান রূপনারায়ন ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, এক্ষেত্রে কখনও রোগীর কবজির একটু উপরের বা বাহু বা ফোরআর্মের অংশ থেকে চামড়া নিয়ে ‘আর্মফ্ল্যাপ’ তৈরি করা হয়। সেই ফ্ল্যাপই লাগানো হয় ক্যান্সারে বাদ যাওয়া জিহ্বার জায়গায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় ‘রিকনস্ট্রাকশন অব টাঙ’।

এক প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গোলাপি জিভের জায়গায় হাতের চামড়ার অংশ প্রতিস্থাপিত করলেও কিছুদিন পর থেকেই পুনর্গঠিত জিভের রঙ লালচে হয়ে উঠে।

কলকাতার বিশিষ্ট প্লাস্টিক সার্জন এবং এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. বিজয় মজুমদার এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।

আরজিকর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শুদ্ধোধন বটব্যাল বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই কাজ করছেন চিকিৎসকরা। তাদের সফলতায় পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক মহল গর্বিত। মুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’য় আক্রান্ত। এদের মধ্যে যাদের জিহ্বা বাদ যায়, তাদের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বা পুনর্গঠিত জিহবা নতুন জীবন দিচ্ছে বললেও ভুল হবে না।

চিকিৎসক রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কৃত্রিম স্বাদকোরক আবিষ্কার হয়নি পৃথিবীতে। ফলে নতুন জিভ পেলেও স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকবেন রোগীরা।

এই সফলতার পরেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যান্সারের কারণের মধ্যে তামাক অন্যতম। সাধারণ মানুষকে তামাক থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
বিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।