ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পেঁয়াজ সংরক্ষণে অত্যাধুনিক হিমঘর হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
পেঁয়াজ সংরক্ষণে অত্যাধুনিক হিমঘর হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজ উৎপাদন এখন অনেকটাই বেড়েছে। গতবছর সাড়ে পাঁচ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে রাজ্যে। রাজ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজ ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ কলকাতার বাজারে আসে। তা থাকে জুলাই-আগস্ট মাস পর্যন্ত।

কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু চাষ বাড়ানো সম্ভব না হওয়ার কারণ ছিল রাজ্যে সংরক্ষণের অভাব।

সংরক্ষণের পরিকাঠামোর অভাব তো ছিলই সঙ্গে পেঁয়াজ অতি দ্রুত পচনশীল হওয়ার কারণে তা বেশিদিন রাখা যেত না। ফলে চাষিরাও পেঁয়াজ চাষের সাহস পেতেন না। এছাড়া রাজ্যে নিজস্ব কায়দায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব থাকায় ভিন রাজ্যের পেঁয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো পশ্চিমবঙ্গকে।

এবার তাই পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য বড় মাপের হিমঘর তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রথমটা হবে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি এই প্রকল্পে ৫০ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।

রাজ্য সরকারের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, এবছর নতুন পেঁয়াজ ওঠার পরই সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন চাষিরা। অত্যাধুনিক সংরক্ষণে পেঁয়াজ থাকলে চাষিদের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারাও লাভবান হবেন।

গত কয়েক বছরে রাজ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন অনেকটাই বেড়েছে। গতবছর প্রায় পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বছরের বেশ কয়েকটি মাস অন্য রাজ্য, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় পশ্চিমবঙ্গকে।

অক্টোবরের পর থেকে বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সময় পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত পেঁয়াজ অবশিষ্ট ছিল না। তখন পুরোপুরি মহারাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে হয়েছে রাজ্যকে। সেখান থেকে পাঠানো পেঁয়াজ দেড়শো রুপির বেশি কেজি দরে কিছু সময় বিক্রি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের ভাণ্ডারে পেঁয়াজ থাকলে বাজার এতটা চড়া হতে পারতো না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

রাজ্যে মূল চাষ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ। ফসল বেশি পরিমাণে উঠতে শুরু করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। রাজ্যে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তা মোটামুটি জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা ভালো হলে এখন যা উৎপাদন হয়, তাতেই আরও কয়েক মাস রাজ্যের নিজস্ব চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো।

পেঁয়াজ।

অপরদিকে সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরাও পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পেতেন না। চার-পাঁচ রুপি কেজি দরে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে হতো। সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হওয়ায় চাষিরাও বেশি দাম পাবেন। এতে আরও বেশি জমিতে চাষিরাও পেঁয়াজ চাষ করার উৎসাহ পাবেন।

এখন মহারাষ্ট্রসহ দেশের সব রাজ্যেই বাঁশ-খড়ের কাঠামো তৈরি করে সেখানেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু বাঁশ-খড়ের ওই ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা পেঁয়াজের বেশ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ক্ষতির মাত্রা বাড়ে। কয়েকটি রাজ্যে অবশ্য বেসরকারি উদ্যোগে হিমঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে তা কম। যা পশ্চিমবঙ্গে বড় মাপে এই প্রথম।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ’ পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক সংরক্ষণাগারের মডেল তৈরি করে ফেলেছে। তবে তা এখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। এতে হিমঘরের তুলনায় সংরক্ষণের খরচ অনেক কম পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আর তা একবার চালু হলে পশ্চিমবঙ্গকে পেঁয়াজের জন্য অন্য রাজ্যের কাছে হাত পাততে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
ভিএস/এইচএডি/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।