ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ভেঙে দেওয়া হোক স্কুল সার্ভিস কমিশন, ক্ষোভ হাইকোর্টের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
ভেঙে দেওয়া হোক স্কুল সার্ভিস কমিশন, ক্ষোভ হাইকোর্টের

কলকাতা: ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।  তীব্র কটাক্ষ করে বিচারপতি বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ভেঙে দিন।

কথার কোনো মিল পাচ্ছি না। রাজ্য সরকার এক কথা বলছেন আর আপনার (এসএসসি) আরেক কথা বলছেন। তাহলে কী দরকার স্কুল সার্ভিস কমিশন রাখার?

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ মে মাসে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৬ হাজার ৮শ ২১টি শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। এই পদগুলোতে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি, নবম-দশমের শারীরিক শিক্ষা ও কর্ম শিক্ষার যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আদালতের নির্দেশ ও সব নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু মূলত এই চারটি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারপতি পুনর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্টে হলফমনামা দিয়েছিল এসএসসি।

এসএসসি হলফনামায় জানিয়েছিল, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়ে গেছেন তাদের পরিবারের কথা ভেবে তাদেরকে বঞ্চিত যেনো না করা হয়। যারা বঞ্চিত এসএসসি তাদের জন্য কিছু শূন্যপদ তৈর করছে। সেটাই পুর্বহালের জন্য আবেদন জানিয়েছিল আদালতে।  

এসএসসির এই আবেদনে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বেজায় চটেছেন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।  

বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সড়ে ১০টার মধ্যে রাজ্য সরকারের জবাব তলব করেছে।

এদিন বিচারপতি বলেন, এ কী ধরনের কথা? রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, যারা যোগ্য অথচ চাকরি পাননি। তারা নিয়োগ পাক? অথচ রাজ্য সরকারের অধীনস্ত এসএসসি, যারা চাকরির সুপারিশ দিয়ে থাকে তারাই বলছেন, অযোগ্যদের চাকরিতে বহাল থাকুক? তাদের কথা ভেবে শূন্যপদ তৈরি করছে এসএসসি? সরকারের দুই পক্ষ দুই ধরনের কথা কেনো বলছে?

এরপরই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাদের কী শিক্ষক পথে বহাল রাখা যায়? যারা নিজেরা অবৈধভাবে চাকরিটা পেয়েছেন তারা ছোট ছোট শিশুদের কী শিক্ষা দেবেন? এই দুই অবস্থান কেন? এসএসসি কী সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই? যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে অবিলম্বে এসএসসি ভেঙে দেওয়া হোক।  

এটা অবক্ষয়, এভাবে চলতে পারে? এরপরই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু আগামী সকালে সাড়ে ১০টার মধ্যে এই ইস্যুতে রাজ্যের জবাব তলব করেছেন।

যদি পরে এদিন শোনা গেছে, এসএসসি সেই আবেদন ফিরিয়ে নিতে চলেছে। যোগ্য চাকরিপ্রার্থী সুমন সরকারের অভিমত, ‘যারা চুরি করে চাকরি পেয়েছেন তাদের হয়ে কোনো মানসিকতা নিয়ে আদালতে আপিল করতে গেছে এসএসসি? লজ্জা বলে তো একটা জিনিস আছে। তারা কী টাকার কাছে সবকিছু বিকিয়ে দিয়েছে?’

চাকরিপ্রত্যাশি আন্দোলোকারীদের সঙ্গে যুক্ত এক বামনেতা বলেন, ‘এসএসসি যেটা চাইছে তা কি তাদের মর্জি মতন? আমরা কদিন আগে শুনেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী চান না কারো চাকরি যাক। যারা চাকরি পেয়েছেন রেকর্ড ভালো, তাদের চাকরি থাক, আবরা যারা বঞ্চিত তাদেরও চাকরির ব্যবস্থা করা হোক। আসলে এসএসসি আদালতে যেটা আপিল করেছেন তা তো মুখ্যমন্ত্রীর মুখের কথা। তাহলে কী তারা এটা কোথাও ভাবছেন, যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল তাদের যদি আদালত বরখাস্ত করেন, তাহলে তারা জোট বাধবে? তাদের জোট কী, চাকরির জন্য যারা যারা টাকা নিয়েছে তাদের দুয়ারে পৌঁছে যাবে? এই আশঙ্কাই থেকে তারা এসব কথা বলছেন? আসলে সরকার দুই পক্ষকে চাকরি দিয়ে একটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। অবৈধভাবে যারা চাকরি পেয়েছে তাদের মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে লজ্জার এবং দুর্ভাগ্যের।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।