খুলনা: শ্রমিকদের হাতে-পায়ে কিংবা মাথায় নেই কোনো গ্লাবস। ভাঙা এক ভবনে তাদের কেউ মেঝেতে ময়দা ঢেলে খামির তৈরি করছেন।
শনিবার (২৫ জুন) খুলনার খালিশপুর এলাকার বউ রাণী সেমাই কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
অনুরূপভাবে নগরীর খালিশপুরের হাসেম ফুড সেমাই কারখানা ও দোলখোলা এলাকায় শামীমের সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মূল গেটে তালাবদ্ধ করে তৈরি হচ্ছে সেমাই। সংবাদকর্মী বুঝতে পেরে আতকে ওঠেন এসব কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।
যদিও গত ৮ জুন খালিশপুরের বউ রাণী সেমাই ও হাসেম ফুড সেমাই কারখানায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় সেমাই উৎপাদন ও সংক্ষরণ করায় জরিমানা করা হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে। তারপর থেকে নেই তাদের অপকর্ম। বউ রাণী সেমাইয়ের মালিক হারুন বাংলানিউজকে বলেন, ভাই কিছু সমস্যা তো থাকেই। আপনারা লিখলে আমাদের আর ব্যবসা হবে না। আপনারা যা চান আমরা তা দিয়ে খুশি করবো, তবু এসব ছবি প্রকাশ করবেন না।
হাসেম ফুড সেমাইয়ের মালিক হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, আপনারা লিখলে আমাদের কপাল পুড়ে যাবে। উনিশ থেকে বিশ হলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাদের জরিমানা করে। আগে যেসব সমস্যা ছিল তা সমাধান করে ফেলেছি। অনেকটা গোপানে ডেকে বলেন- আপনাদের কি খেদমত করতে পারি...।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারে অনেক সেমাই কারখানা থাকলেও এখন চোখে পড়ে না। যেগুলো আছে সেগুলোয় অত্যন্ত গোপনে কাজ হচ্ছে। বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এটি সেমাই কারখানা।
বিশেষ কৌশলে ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, ভেতরে নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি হচ্ছে। তবে এসব কারখানার সামনে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এমনকি সামনের মূল গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। পেছনের গোপন গেট দিয়েই যাতায়াত করছেন মালিক ও কর্মচারীরা। কোনোটির ওপরে টিনের ছাউনি, আবার কোথাও ছাদে খোলা আকাশের নিচে তৈরি হচ্ছে সেমাই।
জানা যায়, সেমাই তৈরিতে ময়দা, বাটার অয়েল, ডালডা, ভোজ্যতেল, অ্যারারুট, সল্ট, ফুড ফ্লেভার, মাখন, চিনি ব্যবহার করার কথা; কিন্তু খুলনার অধিকাংশ কারখানাগুলোয় নিম্নমানের ময়দা ও দূষিত পানি ব্যবহার হচ্ছে। আর শুকানো হচ্ছে রাস্তার পাশে। যেখানে ধুলা-ময়লা পরছে, বসছে মাছি, কাক, কবুতরসহ নানা পাখি।
সেমাই তৈরির পর সেগুলো তেল বা ডালডা দিয়ে ভাজার কথা; কিন্তু বেশিরভাগ কারখানাই পঁচা তেল বা নিম্নমানের পামওয়েল দিয়ে ভাজছে। অনেকে এই ক্ষেত্রে মবিল ব্যবহার করছে, যা অত্যন্ত বিষাক্ত।
সেমাই তৈরির পর তেলে বা ঘিয়ে ভাজলে সেগুলো বাদামি রংয়ের হয়। কিন্তু এগুলো না করে শুধু তাপ দিয়ে শুকিয়ে রঙ মিশিয়ে বাদামি করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সময় সেমাই চটকদার দেখানোর জন্য কাপড়ের রঙ ব্যবহার করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ভেজাল সেমাই প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছু অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করলে কিছু দিন যেতে না যেতে সেই জরিমানার অর্থ উসুল করতে আগের চেয়ে বেশি পরিসরে ভেজাল সেমাই তৈরি করে সেই কারখানা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জেলা প্রশাসন খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। যেসব সেমাই কারখানা ভেজাল ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬
এমআরএম/আইএ