ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প

‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পোশাক রফতানি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৭
‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কবলে পোশাক রফতানি’ প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘দেশের পোশাক রফতানি এখন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। যেদিন আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, সেদিন থেকে আমাদের বন্ধুরা এ নিয়ে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এখন মনে হচ্ছে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ভুল ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বুধবার (০৪ অক্টোবর) রাজধানীর গুলাশান-২ এর হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির  (বিজিএমইএ) ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন,  ‘আমাদের অনেক বন্ধু দেশ স্বার্থের ব্যাপারে আপোষ করে না।

তবে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাবো’।

তিনি আরও বলেন, ‘পোশাক শিল্পের অনেক সংস্কার করেছি। বিশ্বের প্রথম ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ৭টি আমাদের। একটি কারখানাকে নতুন করে সাজাতে সর্বনিম্ন ৫ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর পরও আমেরিকাসহ বিভিন্ন বন্ধুরা আমাদেরকে নেতিবাচকভাবে দেখে। আমরা মাত্র এক বছরের মধ্যে শ্রম আইন করেছি। অথচ আমেরিকায় করতে প্রায় ২৫ বছর লেগেছে’।

‘তাদের মাত্র ৩০ শতাংশ শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। অথচ তারা আমাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার চাপ দিচ্ছে। অ্যাকর্ডের মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও ৫ বছর থাকতে চাচ্ছে। শ্রমিকনেতা নামধারী কিছু ব্যক্তি আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের কাছে শ্রমিকদের সমস্যার কথা বলে চিঠি দিয়েছেন। অথচ আমরা তা জানি না। সেসব নেতারা কোনো শ্রমিকও নন। তারা কিছু সংগঠনের কাছ থেকে ভালো বেতন-বোনাস পেয়ে থাকেন’।

‘আমরা বীরের জাতি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কারও কাছে মাথা নত করবো না’- বলেন তোফায়েল আহমেদ।

গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে ভবনে আগুন লেগেছে, কতোজন সাংবাদিক তা কভার করতে পেরেছেন? লাস ভেগাসে এতো বড় সমস্যা হল, কোনো মিডিয়া সরাসরি দেখাতে পারেনি। অথচ আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলেই আমরা তা সরাসরি দেখানো শুরু করি। রানা প্লাজা ধস সরাসরি দেখানোয় বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে’।

‘এটি হয়তো আমাদের ব্যর্থতা বা গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ববোধের অভাব। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে’।

পোশাক শিল্পে প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যার কারণে এটি তাদের দিতে পারছি না। ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো যুক্তিসঙ্গত। এগুলোর সমাধানের চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সক্ষমতা বৃদ্ধির সূচক ১০৬ থেকে নেমে ৯৯ এ নেমে এসেছে। কিন্তু ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিবেশের সূচকে ১৭৬ এ আছি। এটিকেও ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছি’।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বৈঠকে বলেন, ‘সরকার এখনও ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। স্থিতিশীল বিদ্যুতের দাম তাই এখনই করা সম্ভব নয়। এর জন্য আরও ৪/৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে’।

‘আগামী ৩ বছরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে। গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। এলএমজি আসছে, তখন স্বল্পতা দূর হবে। তবে অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে না থাকলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে না’।

আগামী বছরের এপ্রিল থেকে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বন্ডের কারণে প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার অপব্যবহার হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে সহযোগিতা চান।

তখন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সহযোগিতা করবো। তবে কোথায় সমস্যা তা আপনাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে’।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ম. তামিম বলেন, ‘সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, ক্যাপটিভ রাখবে, নাকি শুধু গ্রিড থেকেই বিদ্যুৎ দেবে। এখানে সমস্যাও রয়েছে। ক্যাপটিভে ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা খরচ পড়ে, অথচ গ্রিডের মূল্য ৭ টাকা। এছাড়া আমাদের বিদ্যুতের দামের কোনো স্থিতিশীলতা নেই। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে হবে। নির্দিষ্ট বছর পর পর বিদ্যুতের দাম কতো শতাংশ বাড়বে, তার নির্দিষ্টতাও থাকা প্রয়োজন’।

বৈঠকের শুরুতে বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির মূল প্রবন্ধে বিদ্যু‍ৎ, অবকাঠামো, চট্টগ্রাম বন্দরের দূরাবস্থা  ও ঢাকা বিমানবন্দরের অচলাবস্থাসহ পোশাক খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। পোশাক শিল্পের জন্য কর রেয়াত সুবিধাসহ প্রণোদনাও দাবি করেন তিনি। এছাড়া ব্যাংকঋণের আরও সহজ শর্ত চান।

বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদসহ ব্যবসায়ী নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এমএএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।