ঢাকা: নিজেদের ২৫ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে গতবছর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আটটি দেশে ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ শীর্ষক এক জরিপ পরিচালনা করে টেলিনর এশিয়া।
জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয় উঠে আসে।
‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ এর দ্বিতীয় অংশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে মহামারির পরবর্তীতে কীভাবে কাজের নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠছে ও পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষ কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তা প্রকাশ করা হয়েছে। সমীক্ষার এ অংশের উঠে এসেছে, মোবাইল কানেক্টিভিটি ক্যারিয়ারের পথ সুগম করেছে; তবে, নিয়োগকর্তাদেরও কর্মস্থলের নীতি ও অনুশীলন উন্নত করার দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। এতে দেখা যায়, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, ক্যারিয়ার দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে এবং নতুন ব্যবসার সুযোগ কাজে লাগাতে এশিয়ার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা পেশাগত জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। একইসঙ্গে, হাইব্রিড কাজের ধরনের নানা দিক ও এটা কীভাবে কর্মী-নিয়োগকারীদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে, তা এ সমীক্ষায় উঠে আসে।
সমীক্ষার উদ্দেশ্য ও মূল বিষয় সম্পর্কে টেলিনর এশিয়ার হেড ইয়র্গেন রোস্ত্রাপ বলেন, আমাদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, মোবাইল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা, প্রবৃদ্ধি, সহজলভ্যতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিয়ে শহর ও গ্রামের মানুষ, বড় প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগ, বিভিন্ন শিল্পখাত এমনকি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধীস্তন কর্মীদের পার্থক্য রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, আর এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা ও সমক্ষতা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। অনেক সময় বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্ভাবনার বিকাশে অনেকেই মোবাইলের পূর্ণ ব্যবহার করছেন না। অনলাইনে কাজের হার বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমীক্ষার ফলাফল সঠিক টুল ব্যবহারে এবং ব্যবধান কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মাধ্যমে ডিজিটাল কাজের পরিবেশ উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, মহামারির কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত হয়েছে; ডিজিটাল বৈষম্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন কমিউনিটির ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষ দেখেছেন, মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তি তাদের কীভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এখন সম্ভাবনা বিকাশে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাসকারীদের জন্যও ডিজিটাল দক্ষতার সুযোগ উন্মোচন করার দায়িত্ব আমাদের। আমরা চাই, টেকসই অর্থনীতির বিকাশে কেউ পেছনে পড়ে না থাকুক।
তিনি বলেন, মোবাইল কানেক্টিভিটি কাজের ধরণ রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা যোগাযোগ উন্নত করবে, উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে ও নতুন সুযোগ তৈরি করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে উন্নত মোবাইল কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের প্রায় আট হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষার ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশি জানান, মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তির কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে; যেখানে ২৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি। ক্যারিয়ার ও দক্ষতার উন্নয়নে মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব আছে কি না এ প্রশ্নে এমন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হয়েছে বলে জানান ৬৯ শতাংশ বাংলাদেশি। লিঙ্গ-ভিত্তিক ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি হয়েছে। ৫৭ শতাংশ মনে করেন, মোবাইল ডিভাইস থেকে আয়ের নতুন উৎস তৈরি হতে পারে। ৫৪ শতাংশ জানিয়েছেন এর মাধ্যমে নতুন চাকরি ও ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজের উদ্দেশ্যে আগামী ৬-১২ মাসের মধ্যে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়াবেন বলে বিশ্বাস করেন ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা। এছাড়াও, মোবাইল প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহারে অথবা কাজের ক্ষেত্রে এর ফিচারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় সবচেয়ে বড় বাধা বলে জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ বাংলাদেশি। আর প্রযুক্তির ওপর ভরসা না পাওয়া এবং এ সংক্রান্ত দক্ষতা ও জ্ঞানের অভাবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না যথাক্রমে ৪৯ ও ৬০ শতাংশ মানুষ।
‘পার্ট টু: ওয়ার্ক’ শীর্ষক দ্বিতীয় অংশের মূল আলোচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে:
আরও বেশি সংখ্যক নারী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কাজের ক্ষেত্রে মোবাইল কানেক্টিভিটির সুফল পাচ্ছেন: ৫৪ শতাংশ নারী অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন ভালো চাকরি ও ক্যারিয়ার সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ইতিবাচক ভূমিকা, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৪৬ শতাংশ। ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়নে মোবাইল ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ সি-স্যুট কর্মকর্তা, যেখানে তাদের অধীনস্ত কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন ৪৭ শতাংশ। ৬০ শতাংশ সি-স্যুইট এক্সিকিউটিভ জানিয়েছেন মোবাইল প্রযুক্তির কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যেখানে একই দলের ৫৩ শতাংশ কর্ম-পরিবেশের গতি বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছেন না বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
কর্মস্থলের নীতির কারণে পিছিয়ে যাওয়া: বাংলাদেশে ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তাদের কর্মস্থলের নীতি সহযোগিতাপূর্ণ নয়। ৮২ শতাংশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মনে করছে তারা তাদের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পেরেছে, যেখানে ৯১ শতাংশ মনে করছে বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। বৈশ্বিকভাবে, ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে বলে জানান; নীতি ও অভ্যাস পরিবর্তন করতে চান না বলে জানান ৩১ শতাংশ, অসহযোগিতাপূর্ণ কর্মনীতির কারণে অসন্তুষ্ট ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা। একইসঙ্গে, ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাদের নিয়োগদাতাদের মোবাইল প্রযুক্তির অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে শেখার ও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, এইচআর ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
ভরসার জায়গাগুলো চিহ্নিত করা: ডিজিটাল ও টেক পরিসরে এখনও প্রাইভেসি ও ডেটা নিরাপত্তার বিষয়টি ভরসার জায়গায় পরিণত হয়নি। গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিষয়ে আস্থাহীনতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মস্থলের সুযোগ পুরোপুরি ব্যবহার না করার পেছনে এটিই প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা প্রযুক্তিতে আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস