ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে রিচার্ড সাইকেস

বাংলাদেশকে বাস্তবমুখী হতে হবে

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৩
বাংলাদেশকে বাস্তবমুখী হতে হবে

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সমালোচক ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের উপদেষ্টা রিচার্ড সাইকেস। একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে বাংলাদেশে প্রযুক্তির উন্নয়নকে কাছে থেকে দেখেছেন তিনি।

তাঁর মতে, বৃহৎ শিল্প নয়, ক্ষুদ্র উদ্যোগই পালটে দিতে পারে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতকে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর বিস্তারিত মতামত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের একটি গণমাধ্যমে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য লেখাটির অনুবাদ তুলে দেওয়া হলো:

২০০৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেছি আমি, সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে।

দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি, যা যুক্তরাজ্যের প্রায় তিনগুণ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশাল এ দেশটি তাদের ছোট সফটওয়্যার শিল্প নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার ও সেবার বাজারে নিজেদের শক্ত স্থান করে নেওয়া তাদের লক্ষ্য। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) একজন উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার।   বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন (ইউনসিটিএডি) শাখা এ কাজে আমাকে সহায়তা করেছে।  

২০০৫ সালে আমি সফর করেছিলাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) একজন অতিথি হিসেবে। বেসিসের সেসময়ের মূলমন্ত্র ছিল, ‘বাংলাদেশ: দ্য নেক্সট ইন্ডিয়া’।

অবশ্য বাস্তব চিত্রটা ছিল ভিন্ন। যদিও বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষা জানা দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল (যাদের সংখ্যা ভারতের প্রায় অর্ধেক), তারপরও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ভারতের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

ভারতের সবচেয়ে বড় সাফল্য, তাদের এ খাতে আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। যার ফলে তাদের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর দশ হাজারেরও বেশি প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়ে থাকে।

কিন্তু অন্যদিকে, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের মূল শক্তি হলো ক্ষুদ্র উদ্যোগ। ছোট, নির্দিষ্ট ও দক্ষ উদ্যোগ। বেসিসের কথাই যদি বলি, তাদের অধীন ৮০০’রও বেশি এমন উদ্যোক্তা রয়েছেন। ২০০৫ সালে আমি তর্ক করে বলেছিলাম, এরাই একদিন বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। এদেরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

আমার সেই অনুমান যে ঠিক ছিল, তা এই ডিসেম্বরের বাংলাদেশ সফরে বুঝতে পেরেছি।

ব্রেন স্টেশন-২৩ নামে এক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলাম এবার। সেখানকার প্রধান নির্বাহী রাইসুল কবির ২০০৫ সালে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইনে কাজ শুরু করেছিলেন। সাফল্যের এক পর্যায়ে আরও কর্মী নিয়োগ করেন তিনি, এবং ২০০৬ সালে নিজেই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠান আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া সবখানেই তার গ্রাহক রয়েছে। ঢাকায় বসে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছেন তিনি। আরও কাজ করছেন উইন্ডোজ, লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম নিয়েও।

বহুমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেল লিমিটেড গ্রুপের একটি বৃহৎ প্রকল্প ‘সার্ভিস ইঞ্জিন’। ৭৫ জন দক্ষ প্রোফেশনাল সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছেন এতে। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব সফটওয়্যার নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছেন তারা।

আমার এবারের সফরের কারণ ছিল দুইদিন ব্যাপী এক সম্মেলন, যার নাম ‘পজিশনিং বাংলাদেশ: ব্র্যান্ডিং ফর বিজনেস’। এর লক্ষ্য, বাংলাদেশের বাণিজ্য খাতের ব্র্যান্ডিংয়ে আমূল পরিবর্তন আনা। বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করা।

আমার সঙ্গে সেখানে একই প্যানেলের সদস্য ছিলেন গ্রামীণ টেলিকমের সফটওয়্যার অপারেশন্স বিভাগের প্রধান নির্বাহী রায়হান শামসি। তার অধীনে বর্তমানে ৫০০টি সফটওয়্যার প্রকল্পের কাজ চলছে, যেগুলো দ্রুত বর্ধমান মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া গ্রাফিকপিপলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তারা ডেনমার্কের অ্যাডপিপল নামে গ্রাফিক্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির মেধাবীদের মান ও প্রতিযোগী মনোভাব নিয়ে আমি আগেও লিখেছি। ওডেস্ক ও ইল্যান্সের মাধ্যমে হাজার হাজার বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছেন। বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানি খাতের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যে এই ফ্রিল্যান্সাররা সম্মিলিতভাবে দখল করেছেন।

বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটি অবশ্যই খুব ভাল খবর। কিন্তু একে আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। সেজন্য চলতি বছর জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখার প্রকাশিত তথ্য-অর্থনৈতিক প্রতিবেদনটি পড়া উচিত। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে অবশ্যই বাস্তবমুখী হতে হবে, বৈশ্বিক সফটওয়্যার ও সেবা অর্থনীতি সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে।

ফিলিপাইন বা থাইল্যান্ডে যেখানে প্রতি পাঁচজনে তিনজন সফটওয়্যার সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত, সেখানে বাংলাদেশে এ সংখ্যা মাত্র প্রতি দশজনে একজন। বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশের জন্য এ হার খুবই কম।

বাংলাদেশের নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে সেটা যে একসময় হবেই, তা আমি নিশ্চিত। সে প্রতিজ্ঞা আমি তাদের মধ্যে দেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।