ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

হ্যাপি বার্থডে, ফেসবুক!

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৩
হ্যাপি বার্থডে, ফেসবুক!

ঢাকা: নয় বছর আগে, ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিছকই কৌতূহলের বশে thefacebook.com নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মার্ক জুকারবার্গ। শুরুতে এটি ছিল কেবল কলেজ বন্ধুদের একটি নেটওয়ার্ক।

জুকারবার্গের সঙ্গে ছিলেন তার সহপাঠী ডাস্টিন মস্কোভিজ, এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, অ্যান্ড্রু ম্যাককুলাম ও চার্লস হিউজেস।

পরের গল্প রূপকথার মতোই। একের পর এক নাটকীয় মোড় পার করে অকল্পনীয় দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে লাগলো ফেসবুক। বিশ্বের কনিষ্ঠতম ধনীর খাতায় লেখা হলো জুকারবার্গের নাম। সমস্ত প্রযুক্তি বিশ্বও নড়েচড়ে বসলো- এবার বুঝি ঘটতে যাচ্ছে আরেকটা বিপ্লব!

তাদের ধারণা মিথ্যা হয়নি। আজ শুধু ‘ফেসবুক’ নামে পরিচিত এ ওয়েবসাইট প্রযুক্তি জগতের অনেক হিসাব-নিকাশই পালটে দিয়েছে।

২০১৩ সালের শুরুতে এসে ফেসবুকের মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১০ কোটিরও বেশি। অর্থাৎ, গড়ে বিশ্বের প্রতি ৭ জন মানুষের ১ জন ফেসবুক ব্যবহার করেন। চমকপ্রদ হওয়ার মতো তথ্যই বটে! পৃথিবীর অন্য কোনো মাধ্যম একসঙ্গে এতো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ঘটাতে পারেনি।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, নিছক সামাজিক ওয়েবসাইট থেকে ফেসবুক এখন সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের আয়নায় পরিণত হয়েছে। এটি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে। শুধু ফেসবুকের কারণে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাচ্ছে অনেক বড় বড় ঘটনা।

‘স্ট্যাটাস’ শব্দটি শুনলেও এখন সামাজিক স্ট্যাটাসের আগে ফেসবুকের স্ট্যাটাসই মনে আসে। এই ‘স্ট্যাটাস’ আক্ষরিক অর্থেই অসংখ্য ফেসবুকপ্রেমীর কাছে সামাজিক স্ট্যাটাসের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।

তার চেয়ে বড় কথা, ব্যক্তি, সমাজের গণ্ডি পেরিয়ে ফেসবুক এখন পৌঁছে গেছে দেশ ও সরকার সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে। সাম্প্রতিককালে আরবের দেশগুলোর বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফেসবুক, এর মাধ্যমেই একত্রিত হয়ে মিশরের জনগণ তাদের শাসককে গদিছাড়া করেছে। বারাক ওবামা পর্যন্ত ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে শাস্তি, পুরস্কার, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস ইত্যাদি তো রয়েছেই।

তবে ভুলে গেলে চলবে না, ফেসবুকের এই বিপুল জনপ্রিয়তার মূল কারণ একটিই- আসক্তি। ব্যবহারের এক পর্যায়ে এর ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে অনেকেই ব্যক্তিগত, বাস্তব জীবনকে গুলিয়ে ফেলেন। আর তখনই ফেসবুক ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মিথ্যা প্রলোভন, ফাঁদ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কীভাবে যে নিজের অজান্তে জড়িয়ে পড়েন, অনেকে বুঝতেই পারেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, শুধু ফেসবুক জনিত কারণে সাংসারিক অশান্তি গত কয়েক বছরে আশংকাজনক হারে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ফেসবুক জনিত কারণে খুন, আত্মহত্যাও বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন।

ফেসবুক ব্যবহার করার সময় নিরাপত্তার বিষয়টিও ছোট করে দেখেন অনেকে। কিন্তু মনে রাখবেন, ফেসবুকে যদি আপনার দশজন বন্ধুও থেকে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে একজন না একজন প্রতি মুহূর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতি ঘণ্টায় একবার হলেও বিশ্বের কোনো এক প্রান্তে বসে আপনার অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে কোনো না কোনো হ্যাকার।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোতে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা মোট লাইক মেরেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি। ফটো আপলোড করেছেন প্রায় ২২ হাজার কোটি।

২০০৭ সালে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট ২৪ কোটি ডলারের বিনিময়ে ফেসবুকের ১ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। এমনকি ইন্টারনেট বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি গুগলও ফেসবুকের অংশীদারিত্ব চেয়েছে। গুগলের এ প্রস্তাব অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক। ২০১২ সালের মে মাসে নিজেদের পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত ফেসবুক। আইপিও’র পর তাদের মূল্য ওঠে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

নবম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র আরও একটি চমক দেখাতে যাচ্ছে ফেসবুক। তা হলো এর ‘গ্রাফ সার্চ’। এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। এবং এখানেই ফেসবুকের কাছে হেরে যেতে পারে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তথ্যভান্ডারের মালিক গুগল।

তাদের মতে, শত কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা গ্রাফ সার্চই হতে পারে ভবিষ্যতের ‘আল্টিমেট’ সার্চ ইঞ্জিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।