ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

পরীক্ষামূলকভাবে শুরু গুগলের চশমা

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৩
পরীক্ষামূলকভাবে শুরু গুগলের চশমা

ঢাকা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গুগল গ্লাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে গুগল। এর মাধ্যমে একটি বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর পেয়েছে প্রযুক্তি বিশ্ব- আগামী বছরের শুরুর দিকেই বাজারে আসছে গুগল গ্লাস।



বুধবার সবার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রযুক্তি উন্মোচন করে গুগল। অবশ্য এটি হাতে পাওয়ার জন্য আগে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। এখান থেকে নির্বাচিত ৮ হাজার ডেভেলপার পরীক্ষামূলকভাবে গুগল গ্লাস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুগল প্লাস ও টুইটারের মাধ্যমে এসব অ্যাপ্লিকেশন জমা দেওয়া যাবে।

একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো গুগল গ্লাসের খুঁটিনাটি জানিয়ে একটি ডেমো ভিডিও প্রকাশ করেছে গুগল। গ্লাস সম্পর্কে জানতে চালু করেছে ওয়েবসাইটও (http://www.google.com/glass)।

২০১২ সালের জুনে গুগলের একটি কনফারেন্সে এই গ্লাস চোখে হাজির হন গুগলের প্রধান নির্বাহী সার্গেই ব্রিন। সেখানেই প্রথমবারের মতো গুগল গ্লাসের আগমনের কথা জানান দেন তিনি। Google-3

চশমা আকৃতির এ গ্লাস যে কোনো বয়সের যে কেউ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে চশমায় কাঁচের জায়গায় রয়েছে একটি ছোট, স্বচ্ছ ডিসপ্লে, যা অনেকটা মোবাইল ফোনের ডিসপ্লের মতো কাজ করবে। ইন্টারনেট ব্যবহার, ছবি ও ভিডিও রেকর্ডিং, ভিডিও কল, ভয়েস কল, ম্যাপ, জিপিএস, ফাইল শেয়ারিং, ওয়াইফাই, ব্লুটুথসহ আধুনিক স্মার্টফোনের অনেক ফিচারই এতে ব্যবহার করা যাবে। চালানো যাবে এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ছোটখাটো অ্যাপ্লিকেশনও। গুগলের মতে, এটি কোনো সহযোগী ডিভাইস নয়, বরং নিজেই স্মার্টফোনের মতো পরিপূর্ণ হিসেবে ডিভাইস হিসেবে কাজ করবে।

প্রচলিত পদ্ধতিতে নয়, এর ছোট্ট ইউজার ইন্টারফেসে পূর্ণ কম্পিউটিং অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য গুগল সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে মাথা, চোখের মণি, কথা ও হাত ব্যবহার করে গ্লাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহারকারীরা মাথা ও চোখের মণির মাধ্যমে স্ক্রল (উঠানামা করানো) করতে পারবেন, মুখে বলে কিংবা ফোনের মাধ্যমে টাইপ করতে পারবেন, হাত নাড়িয়ে ও কথার মাধ্যমে অন্যান্য নির্দেশ দিতে পারবেন। যেমন- ‘ওকে, গ্লাস’ বলার পর ইন্টারফেস চালু হবে, তখন ‘টেক পিকচার’ বললে ছবি উঠবে, কোনো স্থানের নাম বললে সেখানকার ম্যাপ ও জিপিএস দেখিয়ে দেবে, কোনো বিদেশি বর্ণের ছবি তুললে তার তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে দিতে পারবে, সর্বক্ষণিক ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক সাইটে সংযুক্ত রাখতে পারবে। এমনকি গ্লাসকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্ড্রয়েডের মতোই একটি ভিন্নধর্মী অপারেটিং সিস্টেম চালু করবে গুগল, এমন গুজবও শোনা যাচ্ছে।

তবে এখনও এর পরিপূর্ণ ফিচার ও ব্যবহারবিধি প্রকাশ করেনি গুগল। এর হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত তেমন তথ্যও জানায়নি। তবে এর দাম কম না হলেও আকাশচুম্বী হবে না বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্সোনাল কম্পিউটার, মোবাইল, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের পর এটিই হতে পারে ভবিষ্যত কম্পিউটিংয়ের মূল হাতিয়ার। এর আগেও যে এমন ডিভাইস তৈরি চেষ্টা করা হয়নি তা নয়, কিন্তু গুগল গ্লাসের কাছাকাছি আসতে পারেনি কেউই। একদিকে এতে যেমন রয়েছে সর্বাধুনিক স্মার্টফোনের বিভিন্ন ফিচার, তেমনি আরেকদিকে রয়েছে আরামদায়ক, সাধারণ, হালকা ও স্টাইলিশ গড়ন, যা চোখে দিতে কোনো সমস্যাই হবে না। বিশেষ করে গুগলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তৈরি হওয়ার কারণেই এটি বিশ্ব প্রযুক্তিকে বদলে দেওয়ার মতো ডিভাইস হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন একটি সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইট হিসেবে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর অত্যন্ত অল্প সময়ে ইন্টারনেট বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় প্রতিষ্ঠানটি। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে যুগান্তকারী বিভিন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে গুগল, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাডসেন্স, গুগল ম্যাপস, গুগল আর্থ, জিমেইল, স্ট্রিট ভিউ ইত্যাদি। পরবর্তীতে অ্যান্ড্রয়েডের মাধ্যমে স্মার্টফোনের বাজারেও শীর্ষস্থান দখল করে গুগল।

প্রজেক্ট গ্লাসকে গুগলের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলে অভিহিত করেছে বিভিন্ন প্রযুক্তি ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট। এটি মোবাইল ফোনের চেয়েও দ্রুত দৈনন্দিন জীবনে স্থান করে নিতে পারে, এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। একটি বিখ্যাত প্রযুক্তি ওয়েবসাইটের মতে, “গুগল সত্যিই গ্লাসের মাধ্যমে সফল হলে এর শেষ কোথায় দাঁড়াবে বোঝা কষ্ট। সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্লাসকে কেন্দ্র করে গবেষণা শুরু করবে, যার ফলে হয়তো এটিই হবে ভবিষ্যতের মূল যোগাযোগ মাধ্যম। ”

ক্যালিফোর্নিয়ার বে এরিয়ায় অবস্থিত গুগলের গোপন গবেষণাগার গুগল এক্স ল্যাবে তৈরি হয় এই গ্লাস। এখানেই এর আগে তৈরি হয়েছিল চালকবিহীন গাড়ি প্রযুক্তি। বর্তমানে এক্স ল্যাবে স্পেস এলিভেটর, নিউরাল নেটওয়ার্ক (চিন্তার মাধ্যমে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ) ইত্যাদি কিংবদন্তি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে গুগল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।