ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ঘরে বসে কাজ নয়: ইয়াহুতে মারিসার নতুন নীতি

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৩
ঘরে বসে কাজ নয়: ইয়াহুতে মারিসার নতুন নীতি

মারিসা মেয়ার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ইয়াহু। বলা যেতে পারে অনেকটা মৃত্যুশয্যা থেকে ফের সজীব হয়ে উঠেছে কম্পানিটি।

ইন্টারনেট জগতে আরও একবার নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম যে কাজটি মিজ মারিসা করেছিলেন তা হচ্ছে- কর্মীদের সবার জন্য বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ আর প্রত্যেকের হাতে একটি করে স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দেওয়া। আইডিয়াটি তার ধার করা এর আগের প্রতিষ্ঠান গুগলের কাছ থেকে। তবে সবশেষ যে সংযোজনটি করেছেন তা হচ্ছে ‘বাড়িতে কোনো কাজ নয়’ এই নীতির প্রয়োগ। অনেক পুরোনো একটি পদ্ধতি। তবে যা মানা হয়না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কিন্ত মারিসা এতে ছাড় দিতে নারাজ। বলে দিয়েছেন ইয়াহুর কোন কর্মীই আর ঘরে বসে অফিসের কাজ করবে না। যা কিছু প্রয়োজন অফিসে বসেই শেষ করবে।

এনিয়ে দেওয়া অফিস মেমোতে বলা হয়েছে, কাজের সময় কর্মীদের মধ্যে মুখোমুখি মিথষ্ক্রিয়া একটি সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করে।

মারিসা মেয়ারের এ আইডিয়াটিও অবশ্য গুগলের কাছ থেকেই ধার করা।    

অফিসের বাইরে থেকে কাজ করার যে নব্য ধারা যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলো তা আবার দ্রুতই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে- কর্মী তার বাড়ি থেকে কাজ করলে এবং অন্য আরও বিভিন্ন বিষয়ে অফিস ছাড় দিলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। তবে এতে উদ্ভাবনী দক্ষতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বিঘিœত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে আয়েটনা, বুজ অ্যালেন, হ্যামিলটন ও জ্যাপোস ডট কম এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে এখন বেশ ধকল সামলাচ্ছে।

ব্যাংক অব আমেরিকা বাইরে থেকে কাজ করতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলো। কিন্তু গেলো বছর এই ব্যাংকটি তার নীতি পাল্টে বলেছে নির্দিষ্ট কিছু কাজ সুসম্পন্ন করতে অফিসে আসতেই হবে।

অপেক্ষাকৃত তরুণরা আজকাল অফিসে গিয়ে কাজ করার চেয়ে বাইরে থেকে সার্ভিস দিতে বেশি আগ্রহী। বিশ্লেষকরা বলছেন কাজের ক্ষেত্রে আরো ছাড় দেওয়ার বা পাওয়ার মনোভাবটিই যেনো বেশি।

বাইরে থেকে কাজ করিয়ে নেওয়ার পক্ষেও যুক্তি ম্যালা। চ্যালেঞ্জার গ্রে অ্যান্ড ক্রিস্টমাস নামের একটি কোচিং ফার্মের প্রধান নির্বাহী জন চ্যালেঞ্জার বললেন, “অনেক কম্পানি স্রেফ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এই আশঙ্কা থেকেই তাদের কর্মীদের বাইরে থেকে কাজ করার অনুমতি দিতে চায় না। ”

গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়ি থেকে কাজ করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে কিন্তু এতে সৃষ্টিশীলতা কমে যায়। স্যান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক জন জুলিভানের মতটিও ঠিক তাই।

মানবসম্পদ বিষয়ক একটি পরামর্শ কেন্দ্রেরও পরিচালক জুলিভান। তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবন চাইলে আপনাকে মিথষ্ক্রিয়ার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আপনার কর্মচারীকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ”

আর এসব আলোচনা ও যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহু’র নেওয়া নতুন নীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে উদারতার পক্ষে যারা, তারা বলছেন এটি একটি সনাতনি পদ্ধতি। বিশেষ করে যাদের ঘরে শিশু সন্তান বা বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখভাল করতে হয় তাদের জন্য কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়বে। ইয়াহুতে কর্মরত এই ধরনের কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। কারণ মারিসা মেয়ার (৩৭) যখন ইয়াহুর দায়িত্ব নেন তখন তার গর্ভে প্রথম সন্তান। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিলো মারিসাই বুঝবেন কর্মজীবী মা-বাবার যাতনা।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীর ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক রুথ রোজেন বলেন, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মারিসা একটি কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন। কিন্তু তার নীতিতে মনে হচ্ছে পরিবারের প্রতি যতœশীল থেকেই দক্ষতা ও ক্যারিয়ারও গড়ে তুলতে চান এমন নারীদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ধারনের পক্ষে নন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে মেয়েরাই যে কেবল কর্মক্ষেত্রে এই উদারনীতির সুযোগ গ্রহণ করে তা নয়। পুরুষ কর্মীদের মধ্যেও এই সুযোগ গ্রহণের প্রবনতা সমান। ব্যুরোর হিসাবে, আমেরিকানদের ২৪ শতাংশই ঘরে থেকে কাজ করছে। ২০১২ সালে দেশটির ৬৩ শতাংশ নিয়োগদাতা বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন যা ২০০৫ সালে ছিলো ৩৪ শতাংশ মাত্র। এই তথ্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যামিলিজ অ্যান্ড ওয়ার্ক ইনস্টিটিউট।

সাম্প্রতিক মন্দার কালেও এর সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। ইনস্টিটিউটটির প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা এলেন গ্যালিনস্কি বলেন, আমাদের ধারনা ছিলো মন্দার সময় অফিসে গিয়ে কাজ করার ওপর চাপ বাড়বে কিন্তু তা হয়নি। ওই সময়টিতেও বরং বেড়েছে ঘরে বসে কাজ করতে দেওয়ার সুযোগ। এ ধরনের সুযোগ প্রতিষ্ঠানে অফিসের খরচ কমায়। আসা-যাওয়ার সময়টিও কাজের লাগানো যায়, বলেন এলেন।
সিলিকন ভ্যালি থেকে ভিডিও চ্যাট ও তাৎক্ষণিক বার্তা আদান প্রদানের যে প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে তাতে আমেরিকার যে কোনো স্থানে বসে যে কেউ যে কারো জন্য কাজ করতে পারে। তবে সামনা-সামনি বসে কাজ করলে সৃষ্টিশীলতা বাড়ে সে ব্যাপারে ইয়াহুর সঙ্গে দ্বিমত নেই অনেকেরই।

ইয়াহুর নোটিশে বলা হয়েছে- কিছু কিছু সেরা সিদ্ধান্ত অফিসের হলওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা ক্যাফেটেরিয়া খেতে খেতে নেওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ডাকা দলীয় বৈঠকগুলো থেকেও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু আমরা যখন বাড়ি থেকে কাজ করি তখন প্রায়শই কাজের গতি ও মানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়।

ইয়াহু ও গুগল দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করেন এমন একজন কলিন গিলিস। তিনি বলেন, নতুন সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে গুগলের কাছ থেকে ধার করা নীতিতে চলবে ইয়াহু। গুগলের সকল পাঠই যেনো মারিসা ইয়াহুতে নিয়ে আসতে চাইছেন।

কর্মস্থলে ফ্রি খাবার, সাটল বাস, জিম, আইসক্রিম পার্লার আর ড্রাই ক্লিনার থাকলে কর্মীর কাজ ও জীবন ধারন দুটিই সহজ হয়। এছাড়াও তারা যদি কর্মস্থলে অবস্থান করেন এবং একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তাতেও কাজের মান বাড়ে। এ জন্যই অধিকাংশ টেক কোম্পানিতেই কাজের ডেস্কগুলো একটি সঙ্গে লাগোয়া থাকে। কাজের ফ্লোর থাকে খোলা, কমন স্পেসে সোফা বসানো থাকে।

অ্যামাজন ডট কম এর মালিকানাধীন জ্যাপোস ই-কমার্স কম্পানিটি আগে কিছু কিছু কাস্টমার সার্ভিস এজেন্টকে বাইরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিতো। কিন্তু এখন তারা নীতি পাল্টেছে। জ্যাপোসের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্ট দেখেন জাক ওয়্যার। তিনি বলেন, আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এবং নিশ্চিতভাবেই ই-মেইল চালাচালি দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়।

প্রযুক্তি শিল্পের বাইরেও কিছু কিছু কম্পানি তাদের উদার কর্মনীতি পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। ব্যাংক অব আমেরিকা ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক খাতের কিছু প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে কাজ করার ব্যাপারে বেশ কঠোর নীতি নিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য এখনো বাইরে থেকে কাজ করাকেই উৎসাহিত করছে। আয়েটনার ৪৭ শতাংশ কাজ হয় বাইরে থেকে। যা ২০০৫ সালে ছিলো মাত্র ৯ শতাংশ।

আয়েটনার মুখপাত্র সুসান মিলেরিক বলেছেন, এই সময়ে কম্পানিটি তার রিয়েল স্টেট খরচই বাঁচিয়েছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।

বুজ অ্যালেনে কর্মীরা ঘরে থেকে কাজ করতে পারেন। কর্মীদের ধরে রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিলেন প্রতিষ্ঠানটির মানব সম্পদ বিভাগের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েটস ক্রিস্টোফার কার্লসন।

ফ্লোরিডা থেকে বুজ অ্যালেনের জন্য কাজ করেন ক্রিস্টোফার। বাবা মায়ের দেখভাল করার জন্য সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফ্লোরিডায় থাকতে শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু কাজ ছাড়েন নি।

কার্লসন বলেন, এর ফলে আমি আমার কাজ ও পরিবার দুটোর মধ্যেই সমন্বয় করতে পারছি। এবং উভয় ক্ষেত্রেই আমি সফল। আর গ্যাসের পেছনেও আমার খরচ কমেছে।

বাংলাদেশ সময় ১৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৩
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।