ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনাগ্রহ প্রিন্টে, টাইম ম্যাগাজিন বিপদগ্রস্ত

রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৩
অনাগ্রহ প্রিন্টে, টাইম ম্যাগাজিন বিপদগ্রস্ত

ঢাকা: বিশ্বের বিখ্যাত সাময়িকী টাইমের স্বত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান টাইম ইনকরপোরেটেডের (ইনক) ম্যাগাজিন ইউনিট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে মাদার কনসার্ন টাইম ওর্য়ানার গ্রুপ।

মূলত প্রকাশনা ব্যবসায় অব্যাহত লোকসান এবং সংবাদমাধ্যমের প্রিন্ট এডিশনের (ছাপা সংস্করণ) ওপর মানুষের আগ্রহ অব্যাহতভাবে কমে যাওয়ার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিকেশন গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত টাইম ওয়ার্নার।



টাইম ইনক থেকে বেরিয়ে এখন থেকে নিজেদের লাভজনক ইলেক্ট্রনিকস গণমাধ্যমভিত্তিক ব্যবসা যেমন টেলিভিশন চ্যানেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা ইত্যাদিতেই অধিক মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

টাইম ইনকের অধীনে প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপর মিডিয়া জায়ান্ট মেরেডিথ করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরপরই টাইম ওর্য়ানারের পক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হলো।

টাইম ইনকের প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলো মেরেডিথের মাধ্যমে চালানোর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনা চলছিল বলে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়া টাইম ইনক প্রকাশিত বিশ্বের চারটি বিখ্যাত ম্যাগাজিনের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার কারণেই টাইম ওয়ার্নারের এ সিদ্ধান্তের কারণ। ম্যাগাজিন চারটি হলো টাইম, স্পোর্টস ইলাস্ট্রাটেড, ফরচুন এবং মানি।  

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মেরেডিথ মূলত হেলথ ও ওম্যান ম্যাগাজিন প্রকাশ করে থাকলেও তারা টাইম ইনকের প্রকাশিত স্পোর্টস ও নিউজ ম্যাগাজিনগুলোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এগুলোর অর্থনৈতিক ভবিষ্যত অস্পষ্ট থাকায় শেষ পর্যন্ত আগ্রহ হারায় তারা।
 
টাইম ইনক এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহৎ সাময়িকী প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান। তবে প্রিন্ট এডিশনগুলোর অব্যাহত লোকসানের কারণে সম্প্রতি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়া‍র ইঙ্গিত দেয় তারা। এমনকি ব্যয় সঙ্কোচন ও ছাঁটাইয়ের মত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও তারা বাধ্য হচ্ছে।

এসব পদক্ষেপে আসলে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের ছাপা সংস্করণগুলোর অব্যাহত দুর্দশাই প্রতিধ্বনিত হয়। পত্রিকার প্রিন্ট অ্যাডিশনের প্রতি মানুষের ক্রমাগত অনাসক্তির কারণে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পত্রিকাগুলোর রাজস্ব।

গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ প্রান্তিকে টাইম ইনকের রাজস্ব কমে যায় সাত শতাংশ। পক্ষান্তরে তাদের ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াগুলোর রাজস্ব আয় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৬৭ কোটি ডলারে।

বুধবার এক বিবৃতিতে টাইম ওয়ার্নারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নিবাহী জেফরি এল বিউকেস বলেন তার প্রতিষ্ঠান এখন থেকে নিজেদের লাভজনক ব্যবসাগুলোর দিকেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে।
 
অবশ্য টাইম ইনকই সর্বশেষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নয় যেখান থেকে টাইম ওয়ার্নার বেরিয়ে আসলো। লোকসানের মুখে নিজেদের প্রকাশনা সংস্থা টাইম ওয়ার্নার বুক গ্রুপও ছেড়ে দেয় তারা। টাইম ইনকের রাজস্ব গত ৫ বছরেই কমে গেছে মোট ৩০ শতাংশ কমে গেছে। পরিস্থিতি সামলাতে টাইম ইনক গত মাসেই তাদের ৮ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৬ শতাংশকে ছাটাইয়ের ঘোষণা দেয়।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের এভাবে একে একে প্রকাশনা ব্যবসা থেকে সরে আসা বিশ্বের কাগজে ছাপা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য একটি অশনি সঙ্কেতই বটে।

শুধু টাইম ওয়ার্নারই নয় বিশ্বের প্রায় সব বড় বড় পাবলিকেশন হাউজই তাদের প্রিন্ট অ্যাডিশনের ব্যবসায় অব্যাহত লোকসানের সম্মুখীন।

এই গ্রীষ্মেই মার্কিন মিডিয়া জায়ান্ট নিউজ করপোরেশন তাদের বেশ কয়েকটি পত্রিকা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কিংব নিউইয়র্ক পোস্টের মতো পত্রিকাও।

ফলে এটা স্পষ্টটই বোঝা যাচ্ছে যে মুখ থুবড়ে পড়ছে বিশ্বের ছাপা সংস্করণের ব্যবসা। তাই বিষয়টি উপলদ্ধি করে আগেভাগেই নিজেদের ব্যবসায়িক মনোযোগ এখন থেকে অনলাইন বা ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রকাশনা ব্যবসার দিকে কেন্দ্রীভূত করছে উন্নত বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর বাইরে নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।