ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

“স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা অনলাইন নির্ভরতা বাড়াবে”

মনোয়ারুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৩
“স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা অনলাইন নির্ভরতা বাড়াবে”

ঢাকা: স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা দেশে অনলাইনের প্রতি মানুষের নির্ভরতা বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু।

তিনি বলেন,“ ২০১৪ সাল থেকে দেশে স্মার্টফোনের বিক্রি হবে সবচেয়ে বেশি।

কারণ মানুষের সবরকম চাহিদা পূরণের  পাশাপাশি শৌখিন মানুষের কাছে স্মার্টফোনের বিকল্প নেই। আর স্মার্টফোনের সহজলভ্যতায় দেশে ব্যবসা, বাণিজ্য, মিডিয়া, অর্থনীতি সব অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়বে। এখনই অনলাইনের প্রাধান্য ও জনপ্রিয়তা শুরু হয়েছে। ”

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

২৩ এপ্রিল থেকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচদিনের  পঞ্চম ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন, টেলিকম ও আইসিটি মেলা ২০১৩ শুরু হতে যাচ্ছে। এই মেলার আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তিনি বলেন, “মেলায় স্মার্টফোনই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে বলে আমরা মনে করছি। ”

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, “ দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। থ্রিজি বেসরকারি অপারেটরদের দিলে তা কম ব্যয়ে সবার কাছে যাবে। তাই এ ব্যপারে বিলম্ব উচিত নয়। ইন্টারনেট স্পিড বাড়লে দেশের আইটি সেক্টর অনেকদূর এগিয়ে যাবে।  

তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যয় কমলে ও থ্রিজি ইন্টারনেটকে সবার কাছে পৌঁছে দিলে দেশের ১০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। নিউজ পড়া, বিল দেয়া, ব্যাংকিংয়ের সুবিধার জন্য  সবার কাছে ইতিমধ্যেই অনলাইন আজ জনপ্রিয়।

প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মোবাইলের ব্যপারে খুবই শৌখিন প্রকৃতির। দেশে এখন প্রায় ১০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। চলতি বছর আশা করছি দেড় কোটি নতুন গ্রাহক তৈরি হবে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “দেশে নিম্নমানের বিভিন্ন সেট চললেও শতকরা ৩০ ভাগ লোক মানসম্পন্ন মোবাইল সেট ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষও মোবাইলের পিছনে অনেক টাকা ব্যয় করে। তবে কতজন মোবাইল ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। ”

তবে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এ ব্যাপারে সরকার, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান তিনি।

দেশে মোবাইল শিল্পের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এখনো মোবাইল সেট শিল্প ১০০ ভাগ আমদানি নির্ভর। চাইলেই দেশে মোবাইল সেট উৎপাদন সম্ভব । সেইসঙ্গে এ খাতে সৃষ্টি হতে পারে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান। এজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা জরুরী। সরকার এ ব্যপারে এখনও কোন নীতিমালা করেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রকৌশলী জিটু বলেন, “দেশে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি হ্যান্ডসেট আসছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই নিম্নমানের। এসব সেটে নামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই ব্যবসা চালাচ্ছেন। এতে ভালো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ”

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও মোবাইল শিল্পকে বাঁচাতে এখনই দেশে মোবাইল সেট তৈরির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রণোদনা এবং বিনিয়োগের সুরক্ষা। এখাতে বিনিয়োগে টেলিলিংক গ্রুপ বারবার চেষ্টা করেছে কিন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা পায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মোবাইল ব্যবসার ব্যাপারে তিনি বলেন, মোবাইল ব্যবসা কাঁচা টাকার ব্যবসা। এখানে সবকিছু নগদে হয়। দেশে মোবাইলের কোন কারখানা না থাকায় প্রতিবছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ২০১২ সালে ১ কোটি ৬০ লাখ সেট বৈধভাবে এসেছে। অবৈধভাবে আসে আরও প্রায় ৩০ ভাগ। বৈধ সেটের মাঝখানে অবৈধ সেট চলে আসে।

এনবিআরের ব্যাপারে তিনি বলেন, “২০০৫ সালে সব মার্কেটে এনবিআর থেকে একটি চিঠি দেয়া হয় যে অবৈধ হ্যান্ডসেট পেলেই সেট নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্ত সরকারের লোকরাইতো স্থল, নৌ, বিমানবন্দরে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। আসার সময় তারা কেন এসব আনতে দেন?”

তিনি বলেন, “পথ খোলা রেখে অভিযান করা কোনো সমাধান নয়। এজন্য সরকার মনিটরিং জোরদার করতে পারে। এখন বিটিআরসি মার্কেট তল্লাশি করে লোকজন ধরে। কিন্তু অবৈধভাবে মোবাইল সেট ঢোকার পথ বন্ধ করছে না।   সাধারণ ব্যবসায়ীকে হররানির মানে হয়না। সব মিলে মনে হয় এ দেশে ব্যবসা করা মানেই অন্যায় করা। ”

মোবাইল মেলা নিয়ে প্রত্যাশা:

আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচদিনের  পঞ্চম ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন, টেলিকম ও আইসিটি মেলা ২০১৩ শুরু হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচদিনের এ মেলা।

মেলার ব্যপারে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু বলেন, মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবায় বিশেষ অফার ঘোষণা করবে। এই মেলার মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে। মেলা প্রাঙ্গনে বেশ কয়েকটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে ।

প্রতিদিন মেলা সকাল ১০ থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশ মূল্য ২০টাকা এবং শিশুদের জন্য ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলা শেষ হবে ২৭ এপ্রিল।

দেশের বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ও আইটি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট মানুষের কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫দিন ব্যাপী ‘৫ম ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন, টেলিকম ও আইসিটি ফেয়ার-২০১৩’।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই মোবাইল ফোন, টেলিকম ও আইসিটি মেলায় মোবাইল ফোন সার্ভিস প্রোভাইডার, হ্যান্ডসেট ইমপোর্টার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্সসহ এ খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ অংশ নেবে।

মেলায় কম দামে বিভিন্ন মোবাইল সেট, এক্সেসরিজ, ল্যাপটপ কম্পিউটারসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিশেষ কমিশনে পাওয়া যাবে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য ও সেবায় বিশেষ অফার ঘোষনা করবে। এই মেলার মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে।

 মেলার প্রবেশ টিকেটের ওপর বিশেষ ৠাফেল ড্রতে মেলার সমাপনী দিনে ৩১টি আকর্ষণীয় পুরষ্কার প্রদান করা হবে। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ ধরনের মেলা বিশেষ ভূমিকা রাখবে । মেলায় প্রধানমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রী, আইসিটি মন্ত্রী, বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে তিনি জানান।

 সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমবিএ) সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু। মোবাইল ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় ২০০৩ সালে তার নেতৃত্বে বিএমবি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের মোবাইল অপারেটর, আমদানিকারক, পরিবেশক, অ্যাক্সেসরিজ নির্মাণসহ মোবাইলের সাথে সম্পৃক্ত সব সেক্টরের ব্যবসায়ীরা বিএমবিএ’র সদস্য।

তিনি টেলিলিংক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবসার একেবারে শুরু থেকে তিনি মোবাইল ব্যবসায় নিযোজিত আছেন। টেলিলিংক গ্রুপ দেশে ডিজিটাল মোবাইল ব্রান্ডের মালিক। মোবাইল ব্যবস‍ায়ীদের পক্ষে প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন জিটু এফবিসিসিআইসহ দেশের বিভিন্ন ফোরামে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৩
এমআইআর/সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।