ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সিম্ফনির সেট টেকে না ৬ মাসও!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
সিম্ফনির সেট টেকে না ৬ মাসও!

ঢাকা: চায়না সেটে সিম্ফনির ফটকা কারবারে ধরা খাচ্ছেন অগুনতি গ্রাহক। তাদের হাতে সিম্ফনির মোবাইল ফোন সেট টিকছে না ছয় মাসও।

১০-১৫ হাজার টাকা দরে সিম্ফনি বড় বড় কথা বলে ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি দিয়ে সেট বিক্রি করছে। তাতে প্রলুব্ধ হয়ে হাজারো গ্রাহক সেট কিনে ঠকছেন। একের পর এক সিম্ফনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। এরই মধ্য সিম্ফনিতে গ্রাহকের মন উঠে গেছে। তারা এই ফোনের কথা বলতে গিয়ে একটা কথাই বলছেন, ‘সস্তার তিন অবস্থা’।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে একজন গ্রাহকের অভিযোগ, ফোন কিনলাম, কিন্তু কেন? কোন কারণে এটি বাঁকা হয়ে কাঁচ ভেঙে গেলো বুঝতেও পারলাম না। তিনি বলেন, আকর্ষণীয় ও চটকদার প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকদের প্রতারিত করছে এডিসন গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি।

কমদামে সব ধরনের আধুনিক সুবিধার কথা প্রচার করে সিম্ফনি প্রলুব্ধ করছে গ্রাহকদের। কিন্তু কিনেই হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। প্রতিদিনই সিম্ফনির সেবায় বিরক্ত ভোক্তাদের ই-মেইল ফোন ইত্যাদি আসছে। আর তারই সূত্র ধরে বাংলানিউজের নিজস্ব অনুসন্ধানেও দেখা গেছে সিম্ফনির সেট ব্যবহার করে ছয় মাসের বেশি সন্তুষ্ট থাকতে পেরেছেন এমন একজন গ্রাহককেও পাওয়া যায়নি।

দাম যতই হোক, সিম্ফনির বয়স ছয় মাস, এটাই তাদের মন্তব্য।

অভিযোগে আরও এসেছে সিম্ফনি বাজারজাতকারী এসবি টেল এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে অপরচিতি ব্র্যান্ডের কমদামি সেট এনে সিম্ফনি ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করছে।

সিম্ফনির এই প্রতারণার বিষয়টি টেলিফোন যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’রও অজানা নয়। এর আগেই বিটিআরসি বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের নিম্নমানের সেট কেনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে ব্যাপক হারে নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেট আসছে। আমদানির সময় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীরা এসব মোবাইল ফোনসেট আমদানি করছেন। এ বিষয়ে ক্রেতা ও আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিটিআরসি’র এই উদ্বেগ প্রকাশের পরেও তাতে থোরাই পাত্তা দিচ্ছে সিম্ফনি। এখনো তাদের সেটগুলো আসছে চায়না থেকে। আর দেশের সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোনের প্রতি আগ্রহকে পূঁজি করে চুটিয়ে ব্যবসা করে চলেছে।

মাস দুয়েক ভালো সার্ভিসের পর দেখা দিতে থাকে নানা সমস্যা। এর মধ্যে ফোন সেট গরম হয়ে যাওয়া, সেট হ্যাং হয়ে যাওয়া, বেকে যাওয়া, চার্জ না থাকা, চার্জ পয়েন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো হাজারও সমস্যা রয়েছে। স্মার্ট ফোনের নামে যে টাচ স্ক্রিন ফোন সিম্ফনি দিচ্ছে তার স্ক্রিন দিন কয়েকের মধ্যেই আর রেসপন্স করে না।

ফোনে যেমন সার্ভিস থাকছে না তেমনি নষ্ট হলেও সার্ভিস পাওয়া যায়না এমন অভিযোগ রয়েছে সিম্ফনির বিরুদ্ধে। অনেকেরই অভিযোগ, সিম্ফনির সার্ভিস সেন্টারগুলোতে গেলে একটা কথাই বেশি শোনা যায়, এটা ঠিক হবে না, নতুন কিনতে হবে। আর যেগুলো ঠিক হবে বলে কথা দেওয়া হয় তার জন্যও অপেক্ষা করতে হয় ১৫-২০ দিন। আর সারাই করে আনার পর আবার নষ্ট হতে দুই দিনও লাগে না।

সিম্ফনির এক্সপ্লোরার ডব্লিউ-১০০ সেটের দাম শুরুতে ১৯ হাজার ৯৯০ টাকা ছিল। এই সেটের টাচ স্ক্রিন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এমন অনেক উদাহরণই সামনে এসেছে। দিন কয়েকের মধ্যেই স্ক্রিন ছুলেও তা কাজ করে না। ফোন সেট অফ করে অন করা লাগে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, এই অফ করে আবার অন করাই এর সার্ভিস সেন্টারগুলোর সাধারণ ব্যবস্থা।

কেউ ফোন করলে একটাই সমাধান যেনো তাদের জানা। সব রোগেরই একই বটিকা, বললেন একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক।  

ওয়ারেন্টি প্রতারণা সিম্ফনির আরেকটি দিক। গ্রাহকরা জানান, কেনার সময় প্রতিটি সেটেই দেওয়া হচ্ছে এক বছরের ওয়ারেন্টি। কিন্তু সিম্ফনি কিনে ওয়ারেন্টি সময়ের মধ্যে বিক্রেয়োত্তর সেবা মিলছে না। বলা হচ্ছে এই ধরনের সমস্যার সার্ভিসিং ওয়ারেন্টির আওতায় নেই।

এদিকে প্রতারণার পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগও মিলেছে সিম্ফনির বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, মোবাইল ফোন সেটের এই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথেই বেশি সেট আমদানি করছে। এ সেট গুলোর মান অত্যন্ত খারাপ। এতে গ্রাহক যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শুল্ক ফাঁকির কারণে।

এসবি টেল’র ভেতরকার সূত্রগুলোই বাংলানিউজকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। তারাই জানান, সিম্ফনির ডি ৪২, ডি ৪৪, ডি ৬৫, ডি ৭৫, সি ১০৫, ইএক্স ৭০, ই ৬৫, এস ৯০, এস ৯৭, টি ১০০, টি ১৫০, এস ১০৫ এবং এক্স ১০২ আই, এসএল ২০০ মডেলের সেটগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ আসে।

এবিষয়ে সিম্ফনির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এডিসন গ্রুপের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম- মার্কেটিং) জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোন অ্যাপ্লিকেশন চালু অবস্থায় কথা বললে সাধারণত সেট গরম হয়।

ফেসবুক চালু, গেমস খেললে সব স্মার্ট হ্যান্ডসেট গরম হবে এটাই স্বাভাবিক। কোন সেট বেশি গরম হলে তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

ঢালাওভাবে সিম্ফনির সেট ভালো সার্ভিস দিচ্ছে না, এমন বক্তব্য উড়িয়ে দেন এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময় ১৫৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।