ঢাকা: এলটিই বা ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্ম) ইন্টারনেট সেবা চালুর আগে স্টেক হোল্ডার এবং সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের নিয়ে ‘ব্রডব্যান্ড মাস্টার প্ল্যান’ তৈরির তাগাদা দিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটর ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে কম খরচে উচ্চগতির এই ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্যও মত দিয়েছেন তারা।
রোববার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ এলটিই সামিট-২০১৬’ এ অংশ নিয়ে টেলিকম অপারেটর, মোবাইল-হ্যান্ডসেট ও প্রযুক্তি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এই সামিটের আয়োজন করে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার খুব শিগগিরই ফোরজি সেবা চালু করতে যাচ্ছে। ফোরজি সেবা চালু করার আগে তার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করতে এই সামিটের আয়োজন করা হয়।
‘ইনভেস্টমেন্ট, পলিসি অ্যান্ড রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক টু রিয়েলাইজ মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন অ্যাক্সিভিং ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এটুআই’র কর্মকর্তা আশরাফুল আমিন বলেন, এলটিই সেবা অবশ্যই ভালো, তবে তার আগে ব্রডব্যান্ডের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে।
এই সেবার ওপর খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় তা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ব্যবহার করতে পারবে না।
বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (এসএস) এমদাদ উল বারী বলেন, খরচ কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এলটিই চালুর আগে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। স্বল্পমূল্যে এলটিই সেবা যেন জনগণ পেতে পারেন সেদিকে নজর রাখবে কমিশন।
গ্রামীণফোনর সিইও পেটার-বি ফারবার্গ বলেন, তারা এলটিই নেটওয়ার্কের বিস্তারে অংশগ্রহণমূলক একটি নীতিমালা চান। ফোরজি হ্যান্ডসেটের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
রবি সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতের থেকে আমাদের নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি ভালো। এজন্য আমাদের গ্রাহক ও সরকার বড় উইনার। ফোরজি নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির জন্য বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি এর নীতিমালা তৈরির বিষয়ে বিটিআরসি’র নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করেন।
বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও তাইমুর রহমান বলেন, গ্রাহকরা ১৪ শতাংশ ভয়েস ও ৮৪ শতাংশ ডাটা ব্যবহার করেন। সেদিক দিয়ে এলটিই নেটওয়ার্ক খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে টেক নিউট্রালিটিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। যেন তা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়।
ব্যাংকগুলো যেভাবে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে তেমনি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামে এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ চান রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের হেড অব স্ট্র্যাটেজি তারগীবুল ইসলাম।
সামিটের শুরুতে ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল বলেন, সাশ্রয়ী খরচে এলটিই সেবা চালু করতে হবে। না হলে এটি টেকসই হবে না। দ্রুত ও সহজেই এলটিই চালুর আহ্বান জানা তিনি। এখানে অপটিক্যাল ফাইবার ধীর গতির উল্লেখ করে তিনি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অপর এক সেশনে বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (এসএম) নাসিম পারভেজ বলেন, সরকার খুব শিগগিরই ফোরজি চালু করবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক এবং অপারেটর- সবার স্বার্থ দেখবে কমিশন।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো সর্বশেষ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে ডাটা থেকে তাদের আয় বেড়েছে জানিয়ে এরিকসন বাংলাদেশের এমডি রাজেন্দ্র পাংরেকর এই খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
টেকনিক্যাল সেশনে গ্রামীণফোন, রবি ছাড়াও নকিয়া, হুয়াওয়ের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, এরিকসনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের হেড অব নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস ইগর মারসেল, অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বক্তব্য রাখেন।
দিনব্যাপী এই সামিটে বিভিন্ন সেশনে এলটিই’র উপর প্যানেল আলোচনা ছাড়াও নকিয়া, হুয়াওয়ে এবং এরিকসনের পক্ষ থেকে কী-নোট পেপার উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ/