পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটার মাইটভাঙা আমখোলাপাড়ায় বুধবার (০১ মার্চ) সরেজমিনে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পরিদর্শন শেষে একথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তুরঙ্কের ইস্তাম্বুলে সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ; কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মাইটভাঙা আমখোলাপাড়ায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন।
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাচ্ছে বলে জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
তারানা হালিম জানিয়েছেন, ল্যান্ডিং স্টেশনে যুক্ত হওয়ার পরে ঢাকা পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপন করা হয়েছে এবং সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ হয়েছে। আশা করছি আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরই মার্চ থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ট্রান্সমিশন চার্জ কম পড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা ও ফরিদপুরের মানুষ কম খরচে ইন্টারনেট সেবা পাবেন বলে জানান তারানা হালিম।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এর মধ্যে ১২০ জিবিপিএস রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মাধ্যমে আসে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস আইটিসির ব্যান্ডউইডথ ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
তারানা হালিম জানিয়েছেন, দুর্যোগকালে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে কোনো সমস্যা হলে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে ইন্টারনেট সেবা পাবেন গ্রাহকরা।
চাহিদার অতিরিক্ত মালয়েশিয়া, ভুটান, মায়ানমার, শ্রীলংকা, ভারতের সেভেন সিস্টার ও আসাম ব্যান্ডউইডথ নিতে চায় জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আসা অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ আমরা রফতানি করতে পারবো।
বিএসসিসিএসের সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেসিস) ট্রান্সমিশন লিংকের কাজ শেষ করেছে বলে জানান বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং এর ফলে ইন্টারনেটের দাম আরো কমে আসবে।
নতুন এই সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদকাল ২০ থেকে ২৫ বছর হবে জানিয়ে মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদ আর মাত্র ১০ বছর আছে। সেজন্য দ্বিতীয়টির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।
একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-ইউ-৫ সাবমেরিন ক্যাবলে দক্ষিণ-এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৭ দেশ সংযুক্ত হচ্ছে বলে জানান বিএসসিসিএল এমডি।
মনোয়ার হোসেন জানান, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হতে মোট ৬৬০ কোটি টাকা (সরকারের ১৬২ কোটি ও আইডিরি ঋণ ৩৫২ কোটি টাকা) প্রকল্পের খরচ ধরা হলেও ৬০০ কোটি টাকার মধ্যেই এ কাজ শেষ করা হয়েছে।
প্রথম ক্যাবলের খরচ চার বছরের মধ্যে উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় সামরেনি ক্যাবলের খরচ উঠে আসার বিষয়টি নির্ভর করছে কতটুকু রফতানি করতে পারবো তার উপর।
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সিঅ্যান্ডএমএ চুক্তি সই করে বিএসসিসিএল। এর পরিপ্রেক্ষিতে কনসোর্টিয়াম নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে, যা সম্প্রতি সম্পন্ন হয়।
এর আগে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল ‘সি-মি-ইউ-৪’ এ যুক্ত হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
সি-মি-উই-৪ ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন কেবল আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল) সংযুক্ত রয়েছে, যারা ভারত থেকে ব্যান্ডউডথ আমদানি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ