ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

দোরগোড়ায় ওষুধ ও নারীর প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে ইফার্মা

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
দোরগোড়ায় ওষুধ ও নারীর প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে ইফার্মা ইফার্মা

ঢাকা: বর্তমান সময়ে নাগরিক জীবন এবং করপোরেট চাকরির সীমাহীন ব্যস্ততা ও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নন কেউই। যিনি করেন তিনি তো হাড়ে হাড়েই বোঝেন, সেইসঙ্গে তার পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষিরা পরোক্ষভাবে এই প্রভাবের মধ্যে চলে আসেন। প্রিয়জনদের জন্মদিন ভুলে গেলে কোনোভাবে সামলানো যায় কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ?

ঠিক আছে ভুলে যাননি, কিন্তু কেনার সময়? এটিই এখন কোটি টাকা প্রশ্ন। বাসিন্দা যদি হন ঢাকার মতো তীব্র জ্যামযুক্ত শহরের, তাহলে উত্তর মেলা কঠিন।

সময় করে বের হয়েও দেখা যায়, বাড়ির পাশের ফার্মেসিগুলোতে প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ মিলছে না।

প্রায়ই এমন হয়, আপনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়, ডাক্তার দেখিয়েছেন পিজি হাসপাতালের। তিনি যে ওষুধ লিখেছেন সেটি শাহবাগ এলাকার ফার্মেসি ছাড়া মিলছে না। বারবার গিয়ে বা সব ওষুধ একবারে কিনে আনা সবসময় সম্ভব হয় না।  

এইসব পরিস্থিতিতে কেউ যদি যত্নের সঙ্গে ওষুধগুলো আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়? বলার অপেক্ষা রাখে না, আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্য পাওয়ার মতো অনুভূতি হবে আপনার। বিষয়টি তো শতভাগ সত্যি, এমন কোনো পরিবার মিলবে না যে পরিবারে নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজন নেই।

সেইসব প্রয়োজনগুলোকে সহজতর করে তুলছে ‘ইফার্মা.কম.বিডি’ নামে অনলাইনভিত্তিক একটি হেলথ কেয়ার সলিউশন প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সময়ের আশ্চর্য প্রদীপ ‘স্মার্ট ফোন’-এ ঘষা দিলেই ইফার্মা প্রদীপের একনিষ্ঠ দৈত্যের মতো ওষুধপত্র ও হেলথ কেয়ার সংশ্লিষ্ট সামগ্রী পৌঁছে দেবে আপনার হাতে।

ইফার্মার শুরুর গল্প প্রায় ওইরকমই ছিলো। সেই গল্প শোনান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমান খান। দীর্ঘ ১০ বছর বাংলালিংকের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটি ছেড়ে ইফার্মাই এখন ধ্যান-জ্ঞান।  

দোরগোড়ায় ওষুধ ও নারীর প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে ইফার্মাশোনা যাক তার মুখে, ব্যক্তিগত প্রয়োজন থেকেই ইফার্মা করার ভাবনা আসে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গিয়ে কাজের চাপে প্রায়ই পরিবারের ওষুধপত্র কিনতে ভুলে যেতাম। কাছের বন্ধু-বান্ধবের মধ্যেও দেখি, সবাই একইরকম সমস্যায় ভুগছে। মনে থাকলে কেনার সময় নেই, কিনতে গেলে সব এক জায়গায় পাওয়া যায় না। ইফার্মা করার ব্যাপারে সবার সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে ছয়জন প্রফেশনাল একমত হলাম এবং প্লাটফর্ম গঠনে তারা সায় দিলেন।

‘আরও একটি বিষয় মাথায় এলো, বাংলাদেশে ই-কমার্সভিত্তিক সাইটের অধিকাংশই ফ্যাশনেবল প্রোডাক্টকেন্দ্রিক। হেলথ কেয়ার বিশেষ করে ওষুধের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু নেই, থাকলেও নানা সমস্যা। আমরা সেইসব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতাগুলোর মিটিয়ে কিছু করার কথা ভেবে এগোলাম। এজন্য আমরা ওষুধের পাশাপাশি পারসোনাল ও বেবি কেয়ার সংশ্লিষ্ট পণ্যও ইফার্মার সেবার মধ্যে রেখেছি’।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কিশোরী ও তরুণীরা ফার্মেসিতে গিয়ে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে লজ্জাবোধ করেন। আমাদের দেশের বাস্তবতায় শহর বা গ্রামে, ফার্মেসিগুলো পরিচালিত হয় পুরুষ কর্মীদের দিয়ে। এটিও তাদের জড়তার একটি প্রধান কারণ। ফলে অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর পণ্য ব্যবহারে বাধ্য হন। এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় রেখেছে ইফার্মা।  

বেশ জোর দিয়েই আজিজুর রহমান বললেন, নারীদের জন্য আমরা ডেডিকেটেড হটলাইন (০১৯৩৩৩৩৬৬৫৫) চালু রেখেছি। একজন নারীই কলগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কথা বলবেন। আপাতত সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কার্যক্রম চললেও পরবর্তীতে ২৪ ঘণ্টা করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি নারী স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে ইফার্মা কাজ করছে।      

নিজস্ব ড্রাগ লাইসেন্স (নং: ডিসি-১৭৮৫) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে সদস্যপদ (নং-৩৭০) নিয়ে ইফার্মা ২০১৬ সালের মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সঠিক দাম ও মানসম্পন্ন পণ্যের মাধ্যমে হেলথ কেয়ারের যাবতীয় সেবা তারা দিতে চায়। সেইসঙ্গে নিরাপদ অনলাইন শপিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্বের বিবেচিত হচ্ছে।

ইফার্মার সেবাদানের প্রক্রিয়া নিয়ে আজিজুর বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য- ইফার্মা ফিজিক্যাল ফার্মেসি হতে চায় না বরং ফিজিক্যাল ফার্মেসিগুলোকেই এগিয়ে নিতে চাই।  

সেটি কীভাবে?
‘সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকার সব নামী ও নির্ভরযোগ্য ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। খুচরা অর্ডারগুলো আমরা তাদের কাছ থেকেই নিই। করপোরেট অর্ডরি হলে নিই সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে। ধরুন, আপনি উত্তরা থেকে অর্ড‍ার করেছেন। অর্ডার কনফার্ম হওয়ার পর ঢাকা থেকে গিয়ে আপনাকে ওষুধ পৌঁছে দিতে অনেক সময় লেগে যাবে। তখন আমরা যেটি করবো, উত্তরায় আমাদের যোগাযোগে যে ফার্মেসিগুলো রয়েছে সেখান থেকে নিয়ে দ্রুত আপনাকে পৌঁছে দেবো। ’

কথাপ্রসঙ্গে ডেলিভারির বিষয়গুলোও ‍তুলে ধরলেন, অর্ডার কনফার্ম হওয়ার পর ‘আর্জেন্ট ডেলিভারি’ (৯৯ টাকা) তিন ঘণ্টা এবং ‘নেক্সট ডে’ ডেলিভারি’ (৪৯ টাকা) হলে পরের দিন পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত ওষুধ পাশ্ববর্তী আমাদের যোগাযোগের ফার্মেসিগুলোতে মিলে গেলে ওই দিনই পৌঁছে যায়। ঢাকার মধ্যে ৮৯৯ টাকার উপরে ‍অর্ডার থাকলে ফ্রি ডেলিভারি। এমনি যেকোনো ওষুধের অর্ডারে পাঁচ শতাংশ ছাড় রয়েছে। ঢাকার বাইরে হলে কুরিয়ারে পাঠানো হয়, এক্ষেত্রে চার্জ বেশি কারণ, ওষুধ আর অন্য জিনিসপত্র পাঠানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

দোরগোড়ায় ওষুধ ও নারীর প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে ইফার্মা

অর্ডারে বিষয়ে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বললেন আজিজুর, অর্ডার দিলেই যে আপনি ওষুধ পাবেন এমনটি নয়। নেশাগ্রস্তরা সাধারণত অনলাইনে বেশি অর্ডার করেন। আমাদের এক্সপার্টরা থাকেন, তারা অর্ডার দেখেই বুঝে যান সেগুলো নেশার জন্য চাওয়া হচ্ছে কিনা এবং সন্দেহ হলে প্রেসক্রিপশ‍ান চান। যদিও আইন অনুযায়ী, প্রেসক্রিপশান ছাড়া ওষুধ দেওয়ার নিয়ম নেই। আমরাও চেষ্টা করি নিয়মের মধ্যে থেকে সহজভাবে সর্বোচ্চ সেবা দিতে।  সেক্ষেত্রে সাধারণ কিছু ওষুধ ছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান ছাড়া যেসব ওষুধ একেবারেই দেওয়া উচিত নয়, সেসব ক্ষেত্রে আমরা প্রেসক্রিপশান চাই বা ডেলিভারির সময় আমাদের কর্মীরা দেখে নেন। কনফার্ম হয়ে তারপর দেই। সরাসরি প্রেসক্রিপশান আপলোড করারও সুযোগ রয়েছে।

সমস্যার কথাও শোনান, শুরুর দিকে ওষুধের ডেটাবেজ নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। আমাদের দেশে ওষুধের ক্ষেত্রে কোনো সেন্ট্রাল ডেটাবেজ নেই। কোনো কোনো ফার্মেসি রাখে, কিন্তু আপডেট নয়। বাজারে নতুন আসা ওষুধগুলো আপডেট করে না। এখন আমাদের সংগ্রহে প্রায় ১৬ হাজার ওষুধের ডেটা রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে সব ওষুধ কোম্পানির ওষুধ ও সার্জিক্যাল আইটেম মিলে হবে প্রায় ১৪ হাজার।  

‘আমরা শুধু হেলথ কেয়ার সলিউশন নয়- ডক্টর কনসাল্টেন্সি, বিদেশে চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে তুলনামূলক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। আমাদের অ্যাপসের বিষয়টি আলাদা করে বলতে চাই, এটি এমনভাবে করা যে- আপনাকে সময়মতো ওষুধ খেতে, প্রেগন্যান্সির সময় ডক্টর চেকআপ ও বাচ্চার ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে। মনে রেখে রেখে এগুলো করা অনেকসময় কষ্টকর হয়ে পড়ে। গুগল প্লে স্টোরে epharma.com.bd সার্চ করে অ্যাপসটি ইনস্টল করা যাবে’।

সেইসঙ্গে www.epharma.com.bdwww.facebook.com/ epharma.com.bd ভিজিট করার আমন্ত্রণ জানান আজিজুর। ০১৮৮২২২৮২২২ নম্বরটি ফোন-মেসেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। ইমেইল করা যাবে info@epharma.com.bd ঠিকানায়।

কথা শেষের আগে আজিজুর শোনান ইফার্মা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা, ভবিষ্যতে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সুবিধা যোগ করা পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হেলথ কেয়ার সল্যুশন পৌঁছে দেওয়াই ইফার্মার চূড়ান্ত পরিকল্পনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
এসএনএস


 

  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।