প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৯ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যে গণমাধ্যম নীতিমালা রয়েছে সেটার আলোকেই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হয়েছে। অনলাইন মিডিয়া যেন সুনিয়িন্ত্রিতভাবে কাজ করে।
নীতিমালায় গাইডলাইন হিসেবে অনেকগুলো বিষয় ও উদ্দেশ্য বলা আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
“এখানে নিবন্ধনের বিষয় রাখা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যমকে কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। ”
জাতীয় সম্প্রচার আইনে প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশন নামে একটা কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সম্প্রচার আইন প্রক্রিয়াধীন আছে। যখন পাস হবে তখন ওই কমিশনটা চলে আসবে।
“ওই কমিশনের কাছে নিবন্ধন নিতে হবে যারা অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা করবে। ”
তবে যেসব পত্রিকা ও টেলিভিশন অনলাইন ভার্সন পরিচালনা করে তাদের আলাদা করে নিবন্ধন নিতে হবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
“যারা পত্রিকা বের করেন তাদের যদি অনলাইন ভার্সন প্রয়োজন হয় তাহলে তাদের নতুনভাবে নিবন্ধন করতে হবে না। তারা ১৯৭৩ সালের আইনে (প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন) যে নিবন্ধন করেছেন সেটা কনটিনিউ করবে, তবে এই তথ্যটা কমিশনকে জানাতে হবে যে আমরা আগে থেকে লাইসেন্স নিয়ে আছি। ”
টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সন ও অনলাইন টেলিভিশনের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞায় কাভার করবে। অর্থাৎ তাদের নিবন্ধন লাগবে না, শুধু অবহিত করতে হবে।
নিবন্ধনের জন্য কমিশন নির্ধারিত ফি দিতে হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ফি কতো হবে- সেটা কমিশনকে এখতিয়ার দেওয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওনারা নির্ধারিত হারে জমা নেবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা পদ্ধতি কী হবে সেটা কমিশন জানিয়ে দেবে।
কোনো বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে অভিযোগ কমিশন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে।
অভিযোগের ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য-উপাত্ত যদি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুন্ন করে, কাউকে যদি আহত করে, তিনি কমিশনের কাছে অভিযোগ করবেন।
“এটার জন্য বলা হয়েছে যে, কমিশন দুই পক্ষকে শুনানি দেওয়ার পরে নির্দেশনা ও জরিমানা আরোপ করতে পারবে। ”
জরিমানার হার কতো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার হার নির্ধারণ করা হয় নাই। সম্প্রচার আইন আসলে তখন বুঝতে পারবো।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ভাষা, সংষ্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতি, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, উন্নয়ন ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্য, পণ্য-পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ তে যে বিধান আছে সেই বিধান অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কোনো অনলাইন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করলে বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার আছে কিনা- জানতে চাইল তিনি বলেন, এটাতে সরাসরি বলা নেই। সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট-১৯৬৩, তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০৬, কপিরাইট ট্রেডমার্কস প্যাটেন্ট ডিজাইনসহ যে আইন আছে সেগুলো এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সম্পূরক আইনগুলো প্রযোজ্য হবে।
নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা দেওয়া আছে।
“অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড হতে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র বা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে। ”
নীতিমালায় বিজ্ঞাপনের বিষয়ে কিছু বলা আছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সম্প্রচার কমিশন গাইডলাইন তৈরি করবে, সেখানে বিষয়গুলো হয়তো বলা থাকবে।
কমিশন যতোদিন পর্যন্ত না হবে ততোদিন অনলাইন গণমাধ্যমে কীভাবে চলবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থাপনা করবে।
বর্তমানে ১৮শ’র মতো অনলাইন গণমাধ্যম তথ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধন করবে কমিশন।
সম্প্রচার কমিশনের কাঠামো সম্প্রচার আইন এলে জানা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭/আটডেট ১৬২৫ ঘণ্টা
এমআইএইচ/বিএস/জেডএম