এবার এ প্রকল্প নিয়ে ‘অডিও ভিডিও ডকুমেন্টারি’ তৈরির কাজের জন্য আহ্বান করা দরপত্রের বাক্স খোলা (টেন্ডার ওপেন) হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ।
বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর রমনায় বিটিআরসি কার্যালয়ে এ দরপত্রের বাক্স খোলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যা শেষ হয় চলতি বছরের ২ জুন। বুধবার (১২ জুলাই) ছিল দরপত্রের বাক্স খোলার (টেন্ডার ওপেন) নির্ধারিত দিন।
‘এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে সম্পূর্ণ মানদণ্ড (ক্রাইটেরিয়া) পূরণ কারী যোগ্য কোম্পানিকে স্যাটেলাইটের অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ দেওয়া হবে। চলতি মাসের শেষ দিকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
এদিকে দরপত্রের বাক্স খোলা উপলক্ষে বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেজবাহুজ্জামান ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিটিআরসি কার্যালয়ে বুধবার এ টেন্ডার ওপেন করা হয়েছে। অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরির জন্যই আমরা টেন্ডার ওপেন করেছি। এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। ’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে যাবো আমরা। স্যাটেলাইটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি নির্ভরতাও কমে আসবে। তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়টি আবহাওয়া ও বিদেশি সংস্থার উপর নির্ভর করছে। ’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, ‘অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি’ তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য আমদানি করা যন্ত্রপাতির সপ্তম এবং অষ্টম চালান চলতি মাসেই দেশে এসে পৌঁছাবে। দ্রুত সময়ে এই কাজ শুরু করতে চায় সরকার।
এদিকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম অথবা শেষ সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সূত্র বলছে, ফ্রান্সে এরই মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু কারিগরি বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্পেস সেন্টার থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রজেক্টর বসিয়ে মানুষকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখানো হবে।
এরই মধ্যে এ কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা জানান, সিদ্ধান্তের মধ্যে বিগত কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, বেতবুনিয়ায় সেকেন্ডারি গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণস্থলে ‘বেতবুনিয়া প্রাইমারি স্কুল’ জরুরি ভিত্তিতে অপসারণ এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের উপর অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি অন্যতম।
পাশাপাশি আমদানি করা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো এবং সেখানে নিযুক্ত বিদেশি পরামর্শকদের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সফলভাবে এই স্যাটেলাইট মহাকাশে পাড়ি দিলে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হবে বাংলাদেশ। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব-দ্রাঘিমাংশে।
এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মায়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।
২০১৮ সালে শুরু হবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম। স্যাটেলাইটের মধ্যে পাওয়া যাবে ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার। এর মধ্যে ২০ টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে, বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে।
প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরো হয়েছে ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। স্যাটেলাইট তৈরির জন্য ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস কোম্পানির সঙ্গে ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকার চুক্তি করেছে বিটিআরসি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এমআইএস/এমএ