এখন বিশ্বজুড়েই বইছে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য বিপণনের বৈরী হাওয়া। এ পালে জোয়ার বইয়ে দিয়েছে উইকিলিকস।
তবে এ সবকিছুর নেপথ্যে আছে সামাজিকগুরু ফেসবুক। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তিবিদ নিক কিউব্রিলোভিক জানান, এ মুহূর্তে ফেসবুকের মাধ্যমেই বিশ্বের গোপন এবং স্পর্শকাতর সব ব্যক্তিতথ্য আর প্রাতিষ্ঠানিক নথি পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এ তথ্যগুলো কেউ কেউ বিক্রি করছেন চড়াদামে। কেউবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এসব তথ্য ফাঁস করছেন। তথ্য নিরাপত্তা আর সামাজিক যোগযোগের সুকৌশলেই খুঁজে নেওয়া হচ্ছে এসব তথ্য।
বিশ্বব্যাপী এ ধরনের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিতথ্য সাধারণের কাছে প্রমাণপত্র দিয়ে উন্মোচনে উইকিলিকস এখন আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে। আর যদি এ তথ্যের ইন্ধনদাতা হয় খোদ ফেসবুক তবে তো আরেক মহাবিস্ফোরক তথ্য হবে এটি।
এসব কৌশলকে কারিগরিভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিবিদ নিক। নিকের ভাষ্যমতে, ফেসবুক থেকে লগআউট করার পরও প্রতিটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর অন্য যতগুলো সাইটে প্রবেশ করে, পাসওয়ার্ড দেয় এমনকি তথ্য লিপিবদ্ধ করে তা সবই জমা পড়ে ফেসবুকের (ডাটা সার্ভারে) তথ্য ভান্ডারে।
এ তথ্য সংগ্রহের কাজে ফেসবুক বিভিন্ন ধরনের কুকিজ ব্যবহার করে থাকে। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই লগআউট হওয়ার আগে কুকিজগুলো একেবারে মুছে (ডিলিট) দেন না। ভুলের শুরুটা এখানেই। এরপর শুরু হয় কুকিজ দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চের বহুমুখী খেলা। এ প্রক্রিয়া শেষে দফায় দফায় তথ্য জমা পড়তে থাকে ফেসবুক (তথ্যকেন্দ্রে) ডাটা সেন্টারে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ার গ্রেগ জানান, তথ্য বিক্রির এ অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গ্রেগ উল্লেখ করেন, এ মুহূর্তে ফেসবুক তার ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারকারীদের তথ্যকে সুরক্ষিত করতেই কুকিজকেন্দ্রিক নিরাপত্তা দিয়েছে। এর ফলে অবৈধ কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ফেসবুক সহজেই শণাক্ত করে ধরাশায়ী করতে পারে।
আর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যেই এসব কুকিজ যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তা ফেসবুক সার্ভার থেকে একেবারেই মুছে ফেলা হয়। এ ছাড়া এ বিপুল পরিমাণ তথ্য নিয়ে ফেসবুক কোনো অনৈতিক চর্চাই করে না বলেও গ্রেগ যুক্তিখন্ডন করেন।
কিন্তু প্রযুক্তিকৌশল গবেষক নিক জানিয়েছেন, এ সবই অযৌক্তিক সাফাই। এসব কুকিজগুলো ডিলিট না করলে পরে এগুলোই শক্তিশালী স্পাই এবং ফিশিং কুকিজের রূপ নেয়। বিভিন্ন ইমেইল স্প্যাম ছড়িয়ে আরও নানা ধরনের কিওয়ার্ড এবং গোপান নথিপত্র হাতিয়ে নেয় ভোক্তার একেবারেই অগোচরে, অজান্তে।
এরই মধ্যে বিশ্বের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এতে নড়েচড়ে বসেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গোপন তথ্য বিক্রেতারা ফেসবুকের কাঁধে ভর দিয়ে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য পাচার এবং বিপণন করছে- এমন অভিযোগ নতুন নয়।
তবে এ গোপন মিশনে ফেসবুক আর উইকিলিকসের সম্পর্ক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ তা সত্যিই নতুন করে ভাবিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। এমনকি সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছেও এটা হোঁচট খাওয়ার মতো সংবাদ বলেও বিশেষজ্ঞেরা অভিমত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১