ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেটে ছেদ পড়বে না, দক্ষিণে সুলভে সেবা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
ইন্টারনেটে ছেদ পড়বে না, দক্ষিণে সুলভে সেবা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মাত্র একটি সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত থাকায় কোনো কারণে সেটি কাটা পড়লে বিকল্প ব্যবস্থার অভাবে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হতো পুরো দেশকে। তবে এখন আর সে সমস্যা থাকবে না। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো দেশে।

পাশাপাশি দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন সংলগ্ন জেলাগুলোর গ্রাহকরাও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবেন।

দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ব্যান্ডউইথ যোগ হওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যান্ডউইথ রফতানিরও সুযোগ তৈরি হলো।


 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুয়াকাটার দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনটির (এসএমডব্লিউ-৫) উদ্বোধন করেন।
 
এসএমডব্লিউ-৫ এর উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলো।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির (বিএসসিসিএল) অধীনে এটি দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল, যেখান থেকে ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। কক্সবাজারে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল (এসএমডব্লিউ-৪) থেকে ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে।

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয় সাবেমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দেশের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি আরো ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৮০০ জিবিপিএসে দাঁড়াবে। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কোনো কারণে বিকল হলে নতুন এ ক্যাবলের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাবে।
 
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল দক্ষিণ অঞ্চলের পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর ও যশোরের গ্রাহকদের সূলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার পথ খুলে দিলো বলেও উল্লেখ করেন মনোয়ার হোসেন।
 
তিনি বলেন, কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসতে যে খরচ পড়বে, তার চেয়ে অনেক কম খরচে ওই সব এলাকায় ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
 
বিএসসিসিএলের অধীন কুয়াকাটার এসএমডব্লিউ-৫ ল্যান্ডিং স্টেশনের প্রকল্প পরিচালক পারভেজ এম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দু’টি আলোক তরঙ্গ (২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ) চালু করেছি। এর মধ্যে ৫০ জিবিপিএস ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো কারণে প্রথমটি বিকল হলে দ্বিতীয় ক্যাবল দিয়ে সংযুক্ত হওয়া যাবে’।  
 
বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এর মধ্যে ১২০ জিবিপিএস রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএলের মাধ্যমে আসে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ছয়টি আইটিসি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
 
মালয়েশিয়া, ভুটান, মায়ানমার, শ্রীলংকা, ভারতের আসামসহ সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ নিতে চায় বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
 
তুরঙ্কের ইস্তাম্বুলে এসএমডব্লিউ-৫ কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
 
কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মাইটভাঙা আমখোলাপাড়ায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের অবস্থান। আর কুয়াকাটা পর্যটন মোটেল এলাকায় রয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের বিচ ম্যানহোল।
 
বঙ্গোপসাগরের নিচ দিয়ে যাওয়া ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ উচ্চগতির এ সাবমেরিন ক্যাবল কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূর দিয়ে চলে গেছে। গত জানুয়ারি মাসে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে তার সংযোগ স্থাপন করা হয়।
 
কনসোর্টিয়ামের আওতায় দক্ষিণ-এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৭টি দেশের ১৯টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এতে সংযুক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদ ২০ থেকে ২৫ বছর।
 
এর আগে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডব্লিউ-৪ এর সঙ্গে যুক্ত হয়। সেখানে ৩০০ জিবিপিএস ক্যাপাসিটি থাকলেও সেখান থেকে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদ আর মাত্র ১০ বছর বাকি আছে।
 
প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের খরচ চার বছরেই উঠে আসে। ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে পারলে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের টাকাও কম সময়ে উঠে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
 
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হতে মোট ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়।

পড়ুন>>
** কম মূল্যে ইন্টারনেটের পথ খুললো, তবে…

 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।