ফোর জি নিলামের মাধ্যমে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হওয়ার আশা করছেন প্রতিমন্ত্রী।
পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ফোর জি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সবিচালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তারানা হালিম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ সেপ্টেম্বর তরঙ্গ নিলাম গাইড লাইন ও ফোর জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুমোদন দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম বলেন, সরকারের এ অনুমোদনের পর গাইডলাইন অনুযায়ী ২১০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং ৯০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম হবে। নিলামে অপারেটররা অংশ নিতে পারবেন। প্রাক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠান ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবে। উক্ত ব্যান্ডে বিজয়ী হলে পরবর্তী সময়ে তারা ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবে।
তারানা হালিম জানান, অনেক সময় বলা হয় থ্রিজি রোল আউট সম্পূর্ণ হয়নি। এজন্য ফোর জি গাইডলাইনে সুনির্দিষ্টভাবে রোল আউট প্ল্যানও রেখেছি, যেন ধীরে ধীরে কখন কোন সময়ে ফোর জি সেবাটি বিস্তৃত করতে হবে।
রোল আউট নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রথম পর্যায়ে আছে লাইসেন্স প্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে সব বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারে সেবা দেওয়া। নতুন অপারেটর এলে তাদের জন্য এ সময় হবে ১৫ মাস।
দ্বিতীয় পর্যায়ে লাইসেন্স প্রাপ্তির ১৮ মাসের মধ্য ৩০ শতাংশ জেলা হেড কোয়ার্টারে সেবা দিতে হবে। নতুন অপারেটরের ক্ষেত্রে এ সময় হবে ২৪ মাস।
তৃতীয় ফেইজে লাইসেন্স প্রাপ্তির ৩৬ মাসের মধ্যে সারা দেশে এ সেবা দিতে হবে। নতুন অপারেটরের ক্ষেত্রেও এ সময় রাখা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
ফোর জির বিভিন্ন ফি নিয়ে তিনি বলেন, লাইসেন্সের আবেদন ফি ৫ লাখ টাকা। লাইসেন্স ফি ১৫ কোটি টাকা। বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গ্রস রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ। বার্ষিক অডিটেড গ্রস রেভিনিউ ব্যাংক গ্যারান্টি ১৫০ কোটি টাকা। এছাড়া বিলম্ব ফি ১৫ শতাংশ।
ফোর জির প্রস্তাবিত গাইডলাইন নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলার পর কিছু সংশোধন আনা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া আরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবেদন করার যোগ্যতার ক্ষেত্রে অপারেটরদের বিদেশি অংশীদারকে বাংলাদেশ থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
লাইসেন্স অ্যাকুইজিশন ফি ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রস রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা খুব দ্রুত কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। দিনক্ষণ ওইভাবে ঠিক না করলেও মাস হিসেবে কিছুটা গণনা করেছি। অকশন শেষ করতে মোটামুটি ৪২ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগবে। তারপর ৩০ দিনের সময়ের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। আশা করি ৭৫ দিনের মধ্যে তরঙ্গ নিলাম সম্পন্ন করতে পারবো। সেই সঙ্গে লাইসেন্স দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হাতে আরও ৩০ দিন সময় রেখে দিয়েছি।
থ্রি জি রোল আউটের মতো ফোরজি বাস্তবায়ন বিলম্ব হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, থ্রি জি রোল আউট অবলিগেশনটা ছিল। এক্ষেত্রে এটা রিপিটেশন হবে না। কারণ খুব কঠোরভাবে আমি পারসোন্যালি এটা মনিটর করবো। বিটিআরসি অপারেটরদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবে।
ফোর জির জন্য অপারেটররা প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তারানা বলেন, আমরা ট্রায়াল রান করেছি। সব অপারেটর ফোর জির জন্য প্রস্তুত। অপারেটররা গত ৬/৭ মাস ধরে ইক্যুপমেন্ট এনেছেন।
নতুন অপারেটরের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ওপেন রেখেছি। যাদের পূর্ব ইতিহাস পজেটিভ নয়, যারা বিভিন্ন সময়ে ডিফল্টার হয়েছে, তারা যদি নতুন মোড়কে আসতে চান। আমরা অবশ্যই সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবো।
নিলাম থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এটা শুধু তরঙ্গ নিলাম এবং টেকনোলজি নিরপেক্ষতার যে ফি আছে তা নিয়ে।
ফোরজির ভয়েস ও ডাটার জন্য প্রাইসিং অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে বিটিআরসি ঠিক করবেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসির মহাপরিচারক (স্পেকট্রাম) নাসিম পারভেজ বলেন, পুরো পৃথিবীতে যেখানে থ্রিজি টেকনোলজি ইন্ট্রোডিউস হয়েছে সেখানে, থ্রিজি টেকনোলজি হিসেবে কখনই খুব বেশি পপুলার হয়নি। একই জিনিস হয়েছে বাংলাদেশেও।
টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭/আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস