জানা গেছে, ডাই মোল্ড একটি শিল্পের বেসিক মেশিনারিজ হিসেবে বিবেচিত। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মৌলিক অনুষঙ্গ।
স্থানীয় বাজারে গত কয়েক বছরে দেশীয় ব্র্যান্ডের ফ্রিজ, এসি, এলইডি টিভিসহ অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিক্রি ব্যাপক বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসব পণ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মোল্ড ও ডাইয়ের চাহিদা। নিজস্ব চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চমানের মোল্ড ও ডাই এখন দেশেই তৈরি করছে ওয়ালটন। যার বাৎসরিক আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় আমদানি করা মোল্ড ও ডাইয়ের উপরই শতভাগ নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশের শিল্পকারখানা। এতে ব্যয় হতো বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। আবার আমদানির জন্য অর্ডার করা মোল্ড ও ডাইয়ের সরবরাহ পেতে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগতো। এতে ব্যহত হতো স্বাভাবিক উৎপাদন। এখন গাজীপুরে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানায় মোল্ড ও ডাই তৈরি হওয়ায় একদিকে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে; অন্যদিকে উৎপাদনের চাকাও থাকছে সচল। সেইসঙ্গে এ খাতে তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনবল। এই উদ্যোগকে দেশের মেকানিক্যাল সেক্টরের উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকৌশলীরা জানান, একটি পণ্যের আকার, আয়তন, উচ্চতা ও ডিজাইন কেমন হবে সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে এর মোল্ডের ওপর। ওয়ালটন নিজেরাই মোল্ড ও ডাই তৈরি করায় পণ্যের মানোন্নয়নে ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারে তিন দরজা বিশিষ্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার নন-ফ্রস্ট ও ফ্রস্ট ফ্রিজ, গ্লাস ডোর, ব্যাচেলর জন্য বিশেষ ফ্রিজ, সমান ডিপ ও সাধারণ অংশের (৫০-৫০ মডেল হিসেবে পরিচিত) ফ্রিজসহ অসংখ্য বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের ফ্রিজ ও অন্যান্য পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পেরেছে ওয়ালটন। এর ফলে উৎপাদন খরচও বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। যার সুফল হিসেবে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী মূল্যে ওয়ালটনের অসংখ্য পণ্য কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর প্রকৌশলী সাদিকুর রহমান জানান, ওয়ালটনে ২০০৭ সাল থেকে উচ্চ মানসম্পন্ন প্লাস্টিক ও মেটাল যন্ত্রাংশের মোল্ড ও ডাই তৈরি হচ্ছে।
এই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। যেখানে জার্মানি, আমেরিকা ও তাইওয়ান থেকে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইভ এক্সিস ভিএমসি (ভার্টিক্যাল মেশিনিং সেন্টার) মেশিন, রেডিয়াল ড্রিল মেশিন, ইডিএম ও ওয়ার ইডিআর মেশিন, সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিন, সেপার মেশিন, ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট ফার্নেন্স ইত্যাদি। যেখানে কাজ করছেন উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ প্রকৌশলীরা।
ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ডাই-মোল্ড হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের একটি অগ্রগামী ধাপ। বেসিক ইন্ডাষ্ট্রি বলতে যা বোঝায়। এটা সবার থাকে না, শিল্পমালিকরা সাধারণত এসব আউটসোর্সিং করে থাকেন। কিন্তু ওয়ালটন নিজেরাই ডাই-মোল্ড তৈরি করছে। ওয়ালটন দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও মোল্ড-ডাই সরবরাহ করতে সক্ষম। এমনকি রফতানিও সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
এসএইচ