তবে ‘উবার’ সার্ভিস চালুর পর রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। যদিও এখন পর্যন্ত সরকার এসব সেবার কোনো ‘বৈধতা’ দেয়নি।
গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকায় যাত্রা শুরু করে ‘উবার’। তখনই স্মার্টফোন অ্যাপে প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি ডেকে আনার সুবিধা পান রাজধানীবাসী। এরপর দ্রুতই এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সঙ্গে সঙ্গে ‘বিআরটিএ’ উবারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেয়। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে এসব সেবা চলতে কোনো বাধা নেই বলে জানান। আর ‘লিগ্যাল ফ্রেমে’ আনার জন্য বিআরটিএকে নির্দেশ দেন।
নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয়। যা এখনও শেষ হয়নি। পাঁচমাস আগে বিআরটিএ খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যা এখন মন্ত্রিসভায় তোলার অপেক্ষায়।
২০১৬ সালের ৭ মে ঢাকায় বিশ্বে প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং-এর ঘোষণা দেয় ‘স্যাম’ কর্তৃপক্ষ। এটি বাংলাদেশি উদ্যোগ। এদিন ‘স্যাম’ স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং শুরু করে দেয়। তখনই প্রথম স্মার্টফোন ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ডেকে এনে যাতায়াত শুরু হয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বিষয়টি জানার পর ‘বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে এটি বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর কার্যক্রম শিথিল থাকে ‘স্যাম’। পরে উবার চালুর সঙ্গে ‘স্যাম’ কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
তখন ঢাকায় প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি সেবা পাওয়া যেতো শুধু উবারে, আর মোটরসাইকেল ‘স্যাম’ অ্যাপে। পরে গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ‘পাঠাও’ নামের ডেলিভারি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল ‘রাইড শেয়ারিং’ শুরু করে। ‘পাঠাও’ মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
শুরুতে ‘পাঠাও’ নিজস্ব কিছু মোটরসাইকেলে ‘চালক’ নিযুক্ত করে ট্যাক্সি আকারে সেবাটি শুরু করে। ‘ভাড়ার হার’ বেশি থাকায় ‘ফ্রিল্যান্সার’ হিসেবে অনেক বাইকার অ্যাপটি দিয়ে মানুষকে সেবা দিতে শুরু করেন। বিনিময়ে তারা আয়ও শুরু করেন।
চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি উবার অ্যাপে কার, ট্যাক্সির পাশাপাশি মোটরসাইকেল সেবাটি যুক্ত করা হয়। এ নিয়ে ঢাকায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করছে ‘উবার’, ‘পাঠাও’ ও ‘স্যাম’। এছাড়া ‘মুভ’ ও ‘বাহন’ নামে দু’টি অ্যাপও মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার চালু করলেও তাদের ততটা সক্রিয় দেখা যায় না।
তবে ‘উবার’, ‘স্যাম’, ‘পাঠাও’ কার্যত মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ে কতটা সক্রিয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ একজন বাইকার তার কাছে যাত্রীর অনুরোধ আসামাত্র গন্তব্যে নিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়। নিজস্ব পছন্দমতো গন্তব্যে যাচ্ছেন তখন সঙ্গী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। এর ফলে কোনো বাইকার তার রাইডে আরেকজন একই গন্তব্যের যাত্রীকে যুক্ত করে রাইড শেয়ার করতে পারেন না।
উবার জানায়, ঢাকায় ‘অফিস আওয়ারে’ সবচেয়ে বেশি মানুষ উবার অ্যাপ ব্যবহার করে। ঢাকায় উবারের সবচেয়ে বেশি ট্রিপ ও ফাইভ স্টার পাওয়া চালক সাইফুল জানান, ‘দিনে ২টি ট্রিপ তিনি নিজের ইচ্ছেমত গন্তব্য নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। বাকি সব অনুরোধে যাত্রীর ইচ্ছেমতো গন্তব্যেই যেতে হয়। উবারমটোতেও একই নিয়ম বলে জানিয়েছেন বাইকাররা।
তবে ঢাকায় স্মার্টফোন অ্যাপে প্রথম যখন মোটরসাইকেল সেবা শুরু হয় তখন এটি ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি। বিশ্বে ঢাকা প্রথম কোনো শহর যেখানে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং শুরু করে ‘স্যাম’। তবে থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে আগে থেকে মোটরসাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিস চালু ছিলো।
স্যাম ফাউন্ডার ইমতিয়াজ কাসেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চারলাখের বেশি মোটরসাইকেল ঢাকায় চলছে। বেশিরভাগ মোটরসাইকেলে মাত্র একজন চড়েন। অথচ যানজটে মানুষ গন্তব্যে যেতে পারেন না। এ চিত্র দেখার পর তিনি একটি মোটরসাইকেলে দু’জন যাওয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে ‘স্যাম’ অ্যাপ চালু করেন। তখন বিশ্বে আর কোথাও ‘মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং’ শুরু হয়নি। তারা যে ভাড়ায় এটি শুরু করেছিলেন তারপরে আরও অ্যাপভিত্তিক সেবা আসায় ভাড়া বাড়িয়ে নিতে হয়েছে।
মোটরসাইকেল ও কার ট্যাক্সিকে আলাদাভাবে বিবেচনা করে এ নিয়ে দ্রুত একটি নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের দ্বিতীয় অ্যাপ ‘পাঠাও’-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) হোসেন মোহাম্মদ ইলিয়াস বাংলানিউজকে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, তাদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বরে। সিএনজি অটোরিকশার অর্ধেক ভাড়ায় এ সেবা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এটি শুরু করেছিলেন।
সিএনজি অটোরিকশাও মিলবে অ্যাপে, ঘোষণা শিগগিরই
নীতিমালা একদিকে, অ্যাপ সেবা অন্যদিকে
ঢাকাজুড়ে বাড়ছে রাইড শেয়ারিং
রাইড শেয়ারিংয়ে চলছে বাড়তি ভাড়ার প্রতিযোগিতা!
ঢাকায় নারীদের জন্য ‘পিংক স্যাম’- স্কুটি শেয়ারিং
বাংলাদশে সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এসএ/জেডএস