ঢাকা ক্লাবে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিটিআরসি আয়োজিত নিলামে অংশ নিয়ে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্টজ এবং ২১০০ মেগাহার্জে বাংলালিংক ৫ মেগাহার্জ এবং ১৮০০ মেগাহার্টজে কিনেছে ৫ দশমিক ৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা সুযোগদানসহ এতে সরকারের আয় হলো পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
নিলামের পর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের তরঙ্গের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ালো যথাক্রমে ৩৭ ও ৩০.৬ মেগাহার্জ। এর আগে গ্রামীণফোনের ৩২, রবির ৩৬.৪, বাংলালিংকের ২০ ও টেলিটকের ২৫.২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ছিল। রবি আর এয়ারটেল একীভূত হওয়ায় কোনো তরঙ্গ কিনেনি রবি। আর টেলিটকেরও গ্রাহকের চাহিদার থেকে বেশি তরঙ্গ রয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা এবং নতুন তরঙ্গ কেনার ফলে সেবার মান বাড়বে। গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ার প্রবণতায় কলড্রপ এড়ানোর পাশাপাশি ইন্টারনেটের দ্রুত গতি পাবে গ্রাহক।
বাড়তি তরঙ্গে গ্রাহকের সুবিধার বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, যে তরঙ্গ বিক্রি করা হলো আশা করি আমাদের জনগণের কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। কোয়ালিটি অনেক উন্নত হবে। এখন থেকে কোয়ালিটি অব সার্ভিসের দিকে যথেষ্ট পরিমাণে জোর দেব।
তিনি বলেন, বাড়তি তরঙ্গ কেনার মাধ্যমে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো আধুনিক ও দ্রুতগতির ফোর-জি সেবা দিতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি থ্রি-জি সেবার মান বৃদ্ধির ও তথ্যপ্রযুক্তি নিরপেক্ষতা বাড়বে।
প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা (এক তরঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সেবা) না থাকায় সেবার মান উন্নত করা যাচ্ছিলো না বলে অভিযোগ করে আসছিল অপারেটররা।
নিলাম পরিচালনাকারী বিটিআরসির মহাপরিচালক (তরঙ্গ) নাসিম পারভেজ বলেন, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় গ্রামীণফোনকে ২২, রবি ২৬.৪ এবং ১৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মাধ্যমে সেবার মান দেড়গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা এবং তরঙ্গ কেনার মধ্য দিয়ে অবশ্যই কোয়ালিটি অব সার্ভিস উন্নত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা বিটিএস স্থাপন করবে, তাতেও সেবার মান উন্নত হবে।
বাংলালিংকের বাড়তি তরঙ্গ যুক্ত হওয়ায় তরঙ্গ ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়বে বলে জানিয়েছে অপারেটরটি।
এক বিবৃতিতে বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, বাড়তি তরঙ্গের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার অধিক অর্থ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে অপারেটরটি, যা দেশের মোবাইল অপারেটরদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের মধ্যে একটি।
‘গ্রাহকদের উন্নত মানের ডিজিটাল সেবাদানের ক্ষেত্রে স্পেকট্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নতুনভাবে সংযোজিত তরঙ্গ গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন ডিজিটাল সংযোগ ও আরও উন্নত কাভারেজ দিতে সক্ষম হবে, যা গ্রাহকদের আরও ভালো সেবা দিতে সাহায্য করবে। ’
বিবৃতিতে বাংলালিংক জানায়, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি লাইসেন্স গ্রহণের পর ফোরজি চালু করবে বাংলালিংক। নতুন তরঙ্গ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলালিংক প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার জন্যও আবেদন করেছে, যার মাধ্যমে যে কোনো ব্যান্ডের তরঙ্গের মাধ্যমে টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
নিলামের পর সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, প্রযুক্তি নিরপেক্ষে তরঙ্গের সাথে নতুন এই তরঙ্গ যোগ হওয়ায় গ্রামীণফোন দেশের সবচেয়ে আধুনিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেরা ফোরজি সেবাদানে একটি দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে গেলো।
‘১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড ফোরজি বিস্তারে সবচেয়ে কার্যকরী তরঙ্গ এবং গ্রামীণফোনের নতুন ক্রয় তার শীর্ষস্থানকে আরো জোরদার করেছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি তার সম্পূর্ণ টুজি তরঙ্গের জন্য টুজি প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা চেয়ে আবেদন করে এবং রেগুলেটরের অনুমতি লাভ করে। ’
বিবৃতিতে জনানো হয়েছে, গ্রামীণফোন তার নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করেছে, ফলে গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন এইচডি ভিডিও ও লাইভ টিভি স্ট্রিমিং, ঝকঝকে ভিডিও কল এবং অতি দ্রুতগতির ডাউনলোড করতে পারবেন।
আধুনিক নেটওয়ার্ক উপভোগ করার জন্য গ্রাহকদের থ্রিজি সিম পরিবর্তন করে ফোরজি সক্ষম সিম গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছে গ্রামীণফোন।
প্রথমবারে ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ২১০০ মেগাহার্জের থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়। আর এক মাসের মধ্যে চালু হয়েছিল থ্রিজি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমআইএইচ/এএটি